শেষ আপডেট: 2 May 2025 20:31
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির (Digha Jagannath Mandir)দর্শনে গিয়েছিলেন সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh BJP)। তা নিয়ে শুধু বিতর্ক তৈরি হয়নি, দলের একাংশের তীব্র সমালোচনা ও শ্লেষের মুখে পড়েছেন দিলীপ। বিজেপি তথা বাংলার রাজনীতিতে যে দিলীপ ঘোষ ঠোঁট কাটা বলে পরিচিত, তাঁর নিন্দা করতেই অনেক বিজেপি নেতা কর্মী এখন মুখের আগল রাখছেন না। আবার পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh BJP) যা বলছেন, তাতে ভোট বছরে কাদা মাখামাখি অবস্থা গেরুয়া শিবিরে।
বিজেপির (BJP) শীর্ষ সূত্রে খবর, সার্বিক এই পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষকে কোনওভাবেই ক্ষমার চোখে দেখছে না দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গ। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা ও আরএসএসের (RSS) যৌথ সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমারের মধ্যে শুক্রবার এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সঙ্ঘ ও বিজেপির মধ্যে এখন সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন অরুণ কুমার। তাঁরা ঠিক করেছেন, দিলীপ ঘোষকে আপাতত বিজেপির কোনও বৈঠকে ডাকা হবে না। ৬ তারিখ বিজেপির রাজ্য স্তরের বৈঠক রয়েছে। সেই বৈঠকে দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh)না ডাকারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর। ওই বৈঠকে দিল্লির পর্যবেক্ষক হিসাবে থাকবেন সুনীল বনশল। তবে হ্যাঁ, এই কথাটা সাদা কালোয় বা স্পষ্ট ভাবে বিজেপি ঘোষণা করেনি।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রে এও খবর, দলের রাজ্য নেতাদের পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দিলীপ ঘোষকে বিজেপির কোনও কর্মসূচিতে যেন ডাকা না হয়। বা দিলীপ ঘোষ কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করলে তাতে যেন কোনও নেতা সামিল না হন। (Dilip Ghosh Boycott)
স্কুলে পড়ার সময় থেকে আরএসএসের স্বয়ংসেবক ছিলেন দিলীপ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সঙ্ঘের প্রচারক ছিলেন। পরে সঙ্ঘ থেকে রাজনৈতিক সংগঠনে নিয়ে এসে তাঁকে রাজ্য সভাপতি করা হয়। সেই দিলীপ ঘোষের উপর এমন চরম অভিঘাত কোনওদিন নেমে আসতে পারে, তা গেরুয়া শিবিরের (BJP) অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল।
কিন্তু প্রবাদ রয়েছে, রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। রাজ্য বিজেপির এক প্রবীণ নেতা এ ব্যাপারে এদিন দ্য ওয়ালকে বলেন, আসলে অসম্ভবটা করে দেখিয়েছেন দিলীপ ঘোষই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে দিলীপ ঘোষ যে ভাষায় সমালোচনা করতেন, তাতে তাঁকে আপসহীন নেতা বলে মনে করা হত। কিন্তু দিঘায় তাঁর গদগদ ছবিটা গোটা দলকে আন্দোলিত করে তুলেছে। রাজ্য স্তরে বিজেপির সাধারণ কর্মীরা যখন তৃণমূলের কাছে কোথাও মার খাচ্ছেন, কোথাও মিথ্যা মামলায় তাঁদের জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখন দিলীপ ঘোষ কীভাবে বেমালুম সৌজন্য দেখাতে গেলেন, সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না!
জানা গিয়েছে, দিলীপ ঘোষকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বাংলার নেতারাও বিচলিত। বাংলায় আরএসএসের প্রান্ত প্রচারক হলেন জলধর মাহাতো। তিনিও বিষয়টি সঙ্ঘের মধ্যে ও বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে খবর। এও খবর যে, দিলীপের সঙ্গে আপাতত দল ও সঙ্ঘের যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে তিনিও সম্মত।
ঘটনা হল, দিলীপের দিঘা সফর (Dilip Ghosh in Digha) নিয়ে যখন অসন্তোষ দলা পাকিয়েছে দলের মধ্যে, তখন ঘোষবাবু নাম না করেও তীক্ষ্ণ কিছু সমালোচনা করেছেন। কাউকে বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁচলের তলায় বসে রাজনীতি করেছেন’, কারও সম্পর্কে বলেছেন ওঁর তো কত গার্লফ্রেন্ড, ইত্যাদি। আবার দিলীপ দাবি করেছেন, উনিশের লোকসভা ভোটে বাংলায় ১৮টি আসন জেতা বা বিধানসভায় ৭৭টি আসনে জয় তাঁর আমলেই হয়েছে। অর্থাৎ পুরো কৃতিত্ব নিতে চেয়েছেন দিলীপ। এতেও চটেছেন দলের রাজ্য ও কেন্দ্রের নেতারা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, দিলীপকে দলের অনুষ্ঠান বা কর্মসূচিতে বয়কট করা হলে, তিনি বা রিঙ্কু মজুমদার (Dilip Ghosh Wife)হয়তো চুপ থাকবেন না। এর ফলে আরও একপ্রস্ত শঠে শাঠ্যং হতে পারে। তার শেষ পরিণতি কী হয় সেটাই এখন দেখার।