শেষ আপডেট: 12 September 2022 09:09
দ্য ওয়াল ব্যুরো: 'এ তো সিরফ ঝাঁকি হ্যাঁয়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যাঁয়', ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর এই ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (Biswa Hindu Parishad)। তারপর গত তিন দশকে গঙ্গা যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে।
তিন বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাবরি মসজিদের জায়গায় তৈরি হচ্ছে রাম মন্দির। ওই জমি ভগবান রামের জন্মস্থান বলে মেনে নিয়েছে আদালত। ২০১৯ - এ নভেম্বরে সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, আদালত বিবাদ মিটিয়ে দিয়েছে। আর যেন কোনও বিবাদ না হয়। শান্তি বিরাজ করুক দেশে।
আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও ঘোষণা করেন, অযোধ্যার রাম জন্মভূমি পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সামিল হওয়া ছিল সঙ্ঘ পরিবারের বিশেষ সিদ্ধান্ত। আর কোনও মন্দির-মসজিদ বিতর্কে সঙ্ঘ নিজেদের জড়াবে না। তারা শুধুই আত্মিক ও সামাজিক কাজ চালিয়ে যাবে।
কিন্তু বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ (Gyanvapi Mosque Case) এবং মথুরার শাহী ঈদগাহ মসজিদ নিয়ে একের পর এক মামলা এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলির তৎপরতা ঘিরে অনেকেই এই ভেবে চিন্তিত, দেশ কি ফের মন্দির- মসজিদ বিবাদের সাক্ষী হতে চলেছে?
সোমবার বারাণসীর জেলা আদালত (Varanasi Court) জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে হিন্দুদের পুজাপাঠের আর্জি বিবেচনা করার পক্ষে রায় দিয়েছে। হিন্দু পক্ষের দাবি ছিল মসজিদ চত্বরে শৃঙ্গার গৌরীর মূর্তিতে সারা বছর পুজো করার অনুমতি দিতে হবে।
ওই মামলা উপাসনাস্থল আইনের পরিপন্থী দাবি করে আদালতে গিয়েছিল মুসলিম পক্ষ। আদালত সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে।
আদালতের রায় নিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র অলোক কুমার বলেন, আদালতের রায়ে আমরা খুশি। আদালতে একটি আইনি বাধা পেরনো গেল। আদালত বলেছে, মসজিদ চত্বরে পূজাপাঠের অনুমতি দেওয়াতে উপসনাস্থল আইন বাধা নয়। ভিএইচপি মুখপাত্রের বক্তব্য সকলকেই এই মামলাকে আইন এবং আধ্যাত্মিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।
অনেকেই মনে করছেন, ভিএইচপির এই প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট, তারা কাশী ও মথুরা নিয়ে অগ্রসর হবে। আপাতত, আদালতে আস্থা রাখলেও পরিস্থিতি বুঝে আন্দোলনের পথ নেবে।
মথুরার মামলায় দাবি করা হয়েছে, ঈদগাহ মসজিদের জায়গাটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আসল জন্মস্থান বা গর্ভগৃহ। ওই জমি মন্দিরকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
লক্ষনীয় হল, বারাণসী ও মথুরা নিয়ে একের পর এক মামলা দায়ের হতে মুখ খোলেন সঙ্ঘ প্রধান ভাগবত। মাস কয়েক আগে নাগপুরে আরএসএসের সদর দফতরের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মসজিদের নিচে মন্দির খুঁজে বেরচ্ছেন কেন? ভাগবত আরও বলেন, ইতিহাস তো সকলের জানা। মুসলিম শাসকেরা অনেক মন্দির ধ্বংস করেছিল। তাই বলে আজ কি দেশের মুসলিমদের সাজা দেওয়া যায়?
ভাগবতের ওই মন্তব্যের পরও জ্ঞানবাপী মসজিদ, শাহী ঈদগাহ মসজিদের পাশাপাশি তালিকায় যুক্ত হয়েছে লালকেল্লা, তাজমহল ইত্যাদি।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এখনও বলেনি কাশী, মথুরা তারা তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। ফলে সংশয় তৈরি হয়েছে, একদিকে আদালতের হস্তক্ষেপ, অন্যদিকে, দাবি উত্থাপনের মধ্য দিয়ে দেশকে কি আরও এক দফা মন্দির-মসজিদ বিবাদ প্রত্যক্ষ করতে হবে?
বারাণসীর মন্দির-মসজিদ মামলার রায়: মোদী সরকার কি এরপর উপাসনাস্থল আইন বদলের পথে হাঁটবে