শেষ আপডেট: 6th May 2023 08:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কার্যত নজিরবিহীন এক কাজ করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলেছিলেন, 'ওয়ার্কিং মা হওয়াটা নতুন কিছু নাকি?' সত্যিই তো! এই একুশ শতকে ব্যাপারটা আর পাঁচটা ব্যাপারের মতই সাধারণ! কিন্তু তাও বয়ে গিয়েছিল অভিনন্দনের বন্যা! 'ওয়ার্কিং' তো আর যেমন-তেমন নয়! একেবারে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী!
বিশ্বের অন্যতম উন্নত, প্রগতিশীল দেশের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা আর্ডের্ন (Jacinda Ardern) প্রায় উদাহরণ তৈরি করে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে, পদে থাকাকালীন মা হয়ে। তাঁর আগে একবারই এরকম ঘটেছিল প্রায় তিরিশ বছর আগে (Bilawal Bhutto)। পৃথিবীর এক অন্য গোলার্ধের এমন একটি দেশে, যেখানে নারী-স্বাধীনতাটাই একটা প্রশ্নের ব্যাপার!
পাকিস্তান!
এ'হেন বেনজির ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো।
১৯৯০ সাল। কার্যত কাকপক্ষীকে না জানিয়ে, সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে লুকিয়ে করাচির শতাব্দীপ্রাচীন লেডি ডাফরিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ২৫ জানুয়ারি জন্ম দেন এক কন্যা সন্তানের। তাঁর দ্বিতীয় সন্তান। পরে এক জায়গায় লিখেছিলেন, 'পরেরদিনই আমি অফিসে ফিরে গিয়েছিলাম। কাগজপত্র দেখা, ফাইলে সই করা সবই নিত্যদিনের মতই চলল।' করাচির খ্যাতনামা ভুট্টো পরিবারের সন্তান, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার-আলি ভুট্টোর বড় মেয়ে, পরে হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করা বেনজির ভুট্টোর ব্যক্তিত্বটাই ছিল বেনজির। জেনারেল জিয়া উল হকের জমানায় তাঁকে বারবার কয়েদ করা হয়েছিল, পরে ব্রিটেনে চলে যান। দেশে ফেরেন ১৯৮৬-তে। পরের বছর ১৯৮৭ সালে তাঁর বিয়ে হয় আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে।
তাঁর প্রথম নির্বাচন জয় ১৯৮৮ সালে। অথচ সেই নির্বাচনের প্রচারের মাঝেই প্রথমবার মা হয়েছিলেন তিনি। আজ সেই বড় ছেলেই পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী হয়ে ভারতে এসেছেন। বিলাবল ভুট্টো জারদারি (Bilawal Bhutto)।
বিলাবলের জন্ম সেই লেডি ডাফরিন হাসপাতালেই। পড়াশোনার শুরু পাকিস্তানে, তারপর দুবাইতে, পরে অক্সফোর্ডের ক্রাইস্টচার্চ থেকে আধুনিক ইতিহাসে স্নাতক হন। ২০০৭ সালে বেনজির ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডের পরে তিনিই বসেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান পদে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৯। গত বছর তিনি পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্বভার নেন। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে।
রাষ্ট্রপুঞ্জে দাঁড়িয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে 'গুজরাতের কষাই' এবং ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তুলনা করায় বিলাবলের বিরুদ্ধে তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। বিলাবলের মন্তব্যকে 'অসভ্যতার চূড়ান্ত' বলে তোপ দেগেছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। যদিও বিতর্ক বরাবরই বিলাবলের সঙ্গে থেকেছে। তিনি গা করেন না।
বর্ণময় জীবন কাটাতে ভালবাসেন বিলাবল। ভালবাসেন ক্রিকেট, রাইফেল শ্যুটিং, ঘোড়া ছোটানো। শোনা যায়, তিনি তায়কোণ্ডোতে রীতিমত ব্ল্যাকবেল্ট। ইংরেজিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ, উর্দু বলেন বিলিতি টানে। পাকিস্তানের ঘরোয়া রাজনীতিতেও বিলাবলকে নিয়ে জনমত দ্বিধাবিভক্ত। একদিকে পিপিপির উদারনীতিক, মুক্ত অর্থনীতির ধ্বজা উড়িয়ে তিনি পিপিপিকে এনেছেন ক্ষমতার কেন্দ্রে। অন্যদিকে ইমরান খানকে আটকাতে গিয়ে এবং সেনা আর মোল্লাতন্ত্রকে তুষ্ট করতে গিয়ে তাকে সুর চড়াতে হচ্ছে ভারতের বিরুদ্ধে।
আসলে অক্সফোর্ডে পড়াশুনা করলেও বিলাবল দাদুর মন্ত্র ভোলেননি। পাকিস্তানের মোল্লাতন্ত্রকে আজীবন খুশি রাখার চেষ্টা করে গিয়েছিলেন বিলাবলের দাদু তথা বেনজির ভুট্টোর বাবা জুলফিকার আলি ভুট্টো। দেশ ভাগের পর থেকেই ভাগ সেনা ও মোলাতন্ত্র একটা মন্ত্রেই মালা জপে গেছে। তা হল, থিওরি অফ থাউসেন্ড কাটস। ভারতকে ভেঙে খণ্ড খণ্ড করে দাও। ১৯৬৫ সালে সেই উগ্র জাতীয়তাবাদে হাওয়া দিতে রাষ্ট্রপুঞ্জে দাঁড়িয়ে জুলফিকার আলি ভুট্টো বলেছিলেন, ভারতের বিরুদ্ধে হাজার বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে পাকিস্তান। বিলাবলও সেই ট্রাডিশন বজায় রাখতে মরিয়া। পাক সেনা ও মোলাতন্ত্রকে খুশি রাখতে হবে যে।
এদিকে পাকিস্তানের অর্থনীতি টালমাটাল। কার্যত চিনের দিকে চাতক পাখির মত চেয়ে আছে তারা। রাশিয়াকেও যথাসম্ভব মানিয়ে চলতে হচ্ছে। ফলে চিরশত্রুর দেশে তেমন অভ্যর্থনা পাবেন না জেনেও চিন-রাশিয়ার মুখ চেয়ে গোয়ায় এসেছিলেন বিলাবল।
ভারত অবশ্য আতিথেয়তায় ত্রুটি করেনি। সাউথ ব্লক যুগ্মসচিব পদমর্যাদার আধিকারিককে দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে তাঁকে। 'সাংহাই সহযোগিতা গোষ্ঠী'-ভুক্ত বাকি সদস্য দেশের মতই পাকিস্তানকে স্বাগত জানানো হবে, জানিয়ে দিয়েছিল সাউথ ব্লক। তবে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনা ছিল না, তা হয়ও নি। কার্যত আইসিবিএম দেগে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানিয়ে দিয়েছেন, 'সন্ত্রাস-শিল্পের 'প্রোমোটার', 'জাস্টিফায়ার' এবং 'মুখপাত্র' হিসেবে বিলাবলের অবস্থানকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছে ভারত। সন্ত্রাসবাদের আক্রান্তরা কখনওই সন্ত্রাসের মদতদাতাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে কথা বলবে না।
তাতে কি! বিলাবলের রাজনীতি আপাতত সুরক্ষিত! ভারত যত নিন্দা করবে তাঁকে ততই মোল্লাতন্ত্রের কোলের ছেলে হয়ে উঠবে সে।
পাকিস্তানকে ঘরে ডেকে ঠাস করে… মোদী-জয়শঙ্করের নাম ‘জিন্দাবাদ’