শেষ আপডেট: 6th February 2025 09:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাম জমানায় বাংলায় একটানা কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে অর্থমন্ত্রী ছিলেন অসীম দাশগুপ্ত। তৃণমূল জমানায় অমিত মিত্রর ছায়াও যেন তেমনই সীমা থেকে অসীমে পৌঁছচ্ছে।
বুধবার থেকে বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন (BGBS 2025) শুরু হয়েছে কলকাতায়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া মন্ত্রিসভার আর কাউকেই দেখা গেল না। মন্ত্রিসভার সদস্য না হয়েও মঞ্চ উজ্জ্বল হয়ে রইলেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র।
এদিন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার প্রথম কয়েক লাইনও এই মর্মে বেশ প্রণিধানযোগ্য। মুকেশ আম্বানি, সজ্জন জিন্দল, সঞ্জীব পুরী, সজ্জন জিন্দল, সঞ্জীব গোয়েঙ্কাদের মতো তাবড় শিল্পপতিদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হি ইজ দ্য কি ম্যান টু আওয়ার গভর্নমেন্ট। হি নোজ দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি। উই আর থ্যাঙ্কফুল”। অর্থাৎ উনি সরকারের মুখ্য ব্যক্তি। উনি বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। ওঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। অমিত মিত্রর বাবা হরিদাস মিত্র ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার। তাঁর মা বেলা মিত্রর নামেই হাওড়া শাখায় বেলানগর স্টেশনের নামকরণ।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, অমিত মিত্র মন্ত্রী না হয়েও তিনিই কীভাবে মুখ্য হয়ে উঠলেন? কলকাতায় বাণিজ্য সম্মেলন হচ্ছে। সেই মঞ্চে শিল্প মন্ত্রী শশী পাঁজা, অর্থ প্রতি মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মতো মন্ত্রীরা যে বসার আসন পেলেন না, তা কি তাঁদের জন্য অস্বস্তির নয়?
মঞ্চে বসার আসন না পেলেও এদিন শিল্প মন্ত্রী শশী পাঁজাকে দেখা যায়, অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতে একবার মঞ্চে উঠতে। মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যরা দর্শক আসনে বসেছিলেন।
মঞ্চের নীচে দর্শকাসনে রাজ্যের মন্ত্রীরা।
নবান্নের এক শীর্ষ সারির আমলার কথায়, গোটা বিষয়টির প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে। অমিত মিত্রর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগাযোগ বহুদিনের। ২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ফের রেলমন্ত্রী হন, তখন অমিত মিত্র ছিলেন ফিকির সেক্রেটারি জেনারেল। সেই কারণে বিভিন্ন মন্ত্রকের অলিন্দে অমিত মিত্রর যাতায়াত ছিল। সেই সময় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিবিড় হয়। বাংলায় সরকার গঠনের পর মুখ্যমন্ত্রী দেখেন, অর্থ দফতরের দায়িত্ব দেওয়ার মতো তাঁর দলে কোনও যোগ্য নেতা নেই। সেই পরিস্থিতিতে অমিত মিত্রর উপরই ভরসা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অবশ্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো মন্ত্রীদের অমিত মিত্রর উপর খুব একটা ভরসা ছিল না। প্রকাশ্যে না বললেও, ঘরোয়া আলোচনায় অমিত মিত্রর প্রবল সমালোচক ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, অমিত মিত্রও পরিসংখ্যানের জাগলারি ছাড়া আর কিছু করেন না।
টানা দশ বছর অর্থমন্ত্রী থাকার পর অমিত মিত্র ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে আর লড়েননি। কিন্তু তিনি বিধায়ক না হলেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার পদ দিয়ে রাখেন। সূত্রের খবর, এবার বাণিজ্য সম্মেলনের রূপরেখা অমিত মিত্রই রচনা করেছেন। তিনিই স্থির করেছেন, কাকে কাকে আমন্ত্রণ করা হবে, বা কাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সুপারিশই মেনে নিয়েছেন।