শেষ আপডেট: 28th December 2024 17:12
সুমন বটব্যাল
গত শুক্রবার থেকে শনিবার, টানা ৯ দিন রাজ্যের বিভিন্ন জঙ্গলে 'বসবাস' করছে বাঘিনি জিনাত। পরিস্থিতি যা, তাতে এবার বাঁকুড়া থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে অগ্রসর হতে পারে সে!
বন দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক দশকে এরাজ্যে একাধিকবার বাঘ ঢুকেছে। এবং জিনাতের এই আগমনের ঘটনায় 'অস্বাভাবিক' কিছু দেখছেন না বনকর্তারা। বরং, সাড়ে তিন দশক আগে যেভাবে এরাজ্যে হাতির দল ঢুকতে শুরু করেছিল, একইভাবে আগামীদিনে বাংলার বনাঞ্চলে বাঘের করিডর গড়ে ওঠার আশাও দেখছেন তাঁরা।
কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাতোর কথায়, "একসময় বনাঞ্চল খালি হয়ে যাচ্ছিল। বন দফতরের তরফে রাজ্যে জঙ্গলবৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়। জঙ্গলমহলে এখন শাল, অর্জুনের ঘন জঙ্গল আবার বাড়তে শুরু করেছে। আর জঙ্গলের ঘনত্ব বাড়লে সেখানে বাঘের উপস্থিতি খুব স্বাভাবিক ঘটনা।"
প্রসঙ্গত, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামের এই ঘন জঙ্গলের মধ্যে মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট জলাশয়ও। আর এক বনকর্তার কথায়, "গভীর জঙ্গল আর জল হল বাঘের জন্য আদর্শ জায়গা। এখানকার জঙ্গলগুলিতে বুনো শুয়োর, হরিণ, খরগোশ-সহ বিভিন্ন ধরনের জানোয়ারও রয়েছে। ফলে এই ধরনের জঙ্গল বাঘের জন্য আদর্শ জায়গা।"
সেক্ষেত্রে জিনাতকে ওড়িশা ফেরানোটা কষ্টকর হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিম চক্রের মুখ্য বনপাল বিদ্যুৎ সরকার অবশ্য বলেন, "বাঘিনি যাতে লোকালয়ে ঢুকে না পড়ে, সেজন্য পর্য়াপ্ত নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।"
ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ রাজ্যে শতকরা .৭ শতাংশ বনাঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে। বস্তুত, চোরা কারবারীর উপদ্রবের মধ্যেও জঙ্গলের এই বৃদ্ধি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বনকর্তারা।
বনকর্তাদের কথায়, সাড়ে তিন দশক আগে এভাবেই খাবারের খোঁজে ঝাড়খণ্ড থেকে প্রথমে দু একটি হাতি বাংলায় ঢুকতে শুরু করেছিল। পরে তারা দলবেঁধে আসতে শুরু করে ফি-শীতে। বর্তমানে যার মধ্যে অনেকগুলি হাতি এরাজ্যের জঙ্গলেই পাকাপাকি আস্তানা গেড়ে রয়ে গিয়েছে। বাঘের ক্ষেত্রেও অদূর ভবিষ্যতে এমনটা হতে পারে বলে মনে করছেন স্বয়ং বনকর্তারা।
কারণ জিনাতই প্রথম নয়, এর আগে ২০১৫ সালে পুরুলিয়ার কোটশিলায় ঢুকে পড়েছিল একটি চিতা বাঘ। তিন বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালে ঝাড়গ্রামে লালগড়ের গ্রামে ঢুকে পড়ে আরও একটি বাঘ।২০২২ সালেও আরামবাগে ঢুকেছিল একটি বাঘ।
গত শুক্রবার অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর ওড়িশা থেকে ঝাড়গ্রামে প্রবেশ করেছিল জিনাত। পরের দিন অর্থাৎ গত শনিবার রাতে সে পৌঁছেছিল বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ে। টানা সাতদিন সেখানে ঘাঁটি গেড়ে থাকার পর শুক্রবার অবস্থান বদলে ঢুকে পড়েছিল মানবাজারে। বর্তমানে বাঁকুড়ার রানিবাঁধে। পূরবীদেবীর কথায়, "এলাকা না-পসন্দ হলে বাঘ বা বাঘিনি বেশিক্ষণ সেখানে থাকে না। জিনাতের ৯ দিনের বসবাস কিন্তু জানান দিচ্ছে, যে এই জঙ্গল তার পছন্দ!"
অগত্যা, সুন্দরবনের মতো আগামীদিনে জঙ্গলমহলের বিস্তৃর্ণ এলাকাকেও জাল দিয়ে ঘিরতে হবে কিনা, তা নিয়ে কপালের ভাঁজ চওড়া হচ্ছে বনকর্তাদের।