শেষ আপডেট: 4th October 2024 23:05
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ করেছিল সিবিআই।
আদালতে পেশ করা রিমান্ড লেটারে বলা হয়েছিল, অপরাধ স্থল- অর্থাৎ যে সেমিনার হলে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছিল, তা সুরক্ষিত রাখতে কোনও পদক্ষেপ করেননি সন্দীপ ও অভিজিৎ। কিন্তু সিবিআই তদন্তে এখন পরিষ্কার ভাবে এই তথ্য উঠে আসছে যে, সন্দীপ ঘোষ বা টালা থানার তৎকালীন ওসি সেমিনার রুমে পৌঁছনোর অনেক আগে সেই ঘরে চিকিৎসক শিক্ষার্থীর দেহ দেখতে ঢুকেছিলেন ১০ থেকে ১৫ জন ডাক্তার।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তাতে কি তথ্য ও প্রমান নষ্ট হয়নি? এও প্রশ্ন যে, এই ব্যাপারটা আরজি কর হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা কেন চেপে গিয়েছিলেন?
চিকিৎসক-শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রথম জেনারেল ডায়েরি এন্ট্রি হয়েছিল আরজি কর হাসাপাতালের পুলিশ আউট পোস্টে। তা করেছিলেন এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর। সেই জিডি এন্ট্রিতেই বলা রয়েছে যে, উনি হাসপাতাল চত্বরে রাউন্ড দিচ্ছিলেন। সেই সময়ে একজন বেসরকারি সিকিউরিটি গার্ড তাঁকে জানান, থার্ড ফ্লোরে চেস্ট মেডিসিন ওয়ার্ডের ডাক্তাররা পুলিশের একজনকে ডাকছেন। এ কথা শুনেই ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর চেস্ট মেডিসিন ওয়ার্ডে যান। জিডি এন্ট্রিতে লেখা হয়েছে, একজন ভদ্র মহিলা অচৈতন্য অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছেন। আর সেমিনার হলে ১০-১৫ জন ডাক্তার রয়েছেন।
আরজি কর হাসপাতালে ঘটনার পরই একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, সন্দীপ ঘোষ ও পুলিশ অফিসার ও কর্মীরা সেমিনার রুমে ভিড় করে রয়েছেন। এবং সেই ভিডিও দেখিয়ে এই অভিযোগ করা হয়েছিল যে অপরাধস্থলে এত মানুষ একসঙ্গে ঢুকে পড়লে তথ্য ও প্রমাণ নষ্ট হবে না? নাকি তথ্য ও প্রমাণ নষ্ট করতেই তাঁরা ঢুকেছিলেন।
অথচ অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টরের বয়ান অনুযায়ী, বিষয়টা যদি তাই হয় তাহলে অপরাধ স্থলে ঢুকে পড়ে সেই ভুল কাজটা করেছিলেন হাসপাতালেরই কিছু ডাক্তার। এবং ঘটনা হল, তখনও সন্দীপ ঘোষ বা তাঁর অনুগামী বলে পরিচিতরা সেমিনার রুমে ঢোকেননি। সিবিআইয়ের রিমান্ড নোট অনুযায়ী, সন্দীপ ঘোষ ঘটনাটি জানতে পারেন সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে। তার পর ১০টা ৫ মিনিট নাগাদ তিনি টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে ফোন করেন।
এখন কৌতূহলের বিষয় হল, সেমিনার হলে যে ডাক্তাররা ঘটনার কথা জেনেই ঢুকে পড়েছিলেন তাঁরা কারা? তাঁদের মধ্যেও কি জুনিয়র ডাক্তাররা ছিলেন? আরজি কর হাসাপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের কি জানা রয়েছে, ওই ১০-১৫ জন ডাক্তার কারা? কেন এই বিষয়টি নিয়ে তাঁরা নীরব রইলেন?
সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে সিবিআই ইতিমধ্যে তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেমিনার হলে অর্থাৎ যেখানে অপরাধের ঘটনা ঘটেছে সেখানে দু’জন জুনিয়র ডাক্তারের ফিঙ্গার প্রিন্টও পাওয়া গেছে। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে সিসিটিভি ফুটেজও থাকার কথা।
এখানে আরও একটি প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হচ্ছে। ক্রাইম সিন সুরক্ষিত রাখতে না পারার অভিযোগ তোলা হয়েছে সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসির বিরুদ্ধে। সিবিআই আদালতে পেশ করা রিমান্ড লেটারে তা পরিষ্কার করে লিখেছে। কিন্তু জিডি এন্ট্রির কাগজ হাতে পাওয়ার পর শুধু সন্দীপ ঘোষ ও টালার প্রাক্তন ওসি কে কি দায়ী করা যাবে?
প্রসঙ্গত, আগামী সোমবার সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্ট পেশ করবে। তার আগে শুক্রবার শিয়ালদহ কোর্টে মুখবন্ধ খাম জমা দিয়ে একটি আবেদন জানিয়েছে সিবিআই। সিবিআইয়ের তরফে আদালতে বলা হয়েছে, এই তদন্তের উপর সর্বোচ্চ আদালত নজর রাখছে। সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময়ে স্ট্যাটাস রিপোর্টও পেশ করা হয়েছে। এই আবেদনের (রিমান্ড নোট) সঙ্গে আর একটি মুখ বন্ধ খামে আবেদন জমা দেওয়া হল আদালতে। মহামান্য আদালত যেন তা বিবেচনা করে সিবিআইকে জানায়। কারণ, তার উপরই পরবর্তী তদন্তের লাইন নির্ভর করবে।