শেষ আপডেট: 13th July 2023 12:57
দ্য ওয়াল ব্যুরো: “ওই ফুল ফোটে বনে যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই”... না, সময় নষ্ট করার মতো সময় মৌমাছিদের (Bees) একটুও নেই। যে কাজটা যখন দরকার, সেই কাজটা তখনই করার অভ্যাস তাদের। কোনটা আগে হবে, আর কোনটা পরে করলেও চলবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে এক সেকেন্ডেরও কম সময় লাগে মধুকরদের (Bees)। কবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য মৌমাছিদের এই গুণটা বেশ চিনেছিলেন। অনেক আগেই ইঙ্গিতে তিনি বলে গিয়েছিলেন সেই সার সত্য।
বিজ্ঞানীরা এখন খুঁজে বের করেছেন মৌমাছিরা (Bees) খুব দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাদের মনে নাকি কোনও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। চরম বিপদের মধ্যে পড়লেও তারা খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। তাতে সময় লাগে এক সেকেন্ডেরও কম। আর সব সিদ্ধান্তই প্রায় নির্ভুল ও সঠিক। মানুষ যতটা ভাবতেও পারবে না, ততটাই দ্রুত কাজ সেরে বেরিয়ে যেতে পারে মৌমাছিরা। সিডনির ম্যাকোয়ারি ইউনিভার্সিটি ও শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বছরের পর বছর মৌমাছিদের নিয়ে গবেষণা করে, তাদের সংসারে আড়ি পেতে এই চমকে দেওয়ার মতো তথ্য পেয়েছেন।
সিডনির পতঙ্গবিদ অ্য়ান্ড্রু ব্যারন ও শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক জেমস মার্শাল বলছেন, মানুষ যেমন দ্বিধায় ভোগে, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে মৌমাছিরা তেমন নয়। তারা অত ভাবনাচিন্তা করে সময় নষ্ট করে না। কোন পরিস্থিতিতে কী কাজ করতে হবে তা সেকেন্ডেরও কম সময় ঠিক করে নিতে পারে মৌমাছিরা। তাদের উপস্থিত বুদ্ধি এতটাই প্রখর যে, বিপদে পড়লেও বাঁচার উপায় স্থির করে নিতেও বিন্দুমাত্র দেরি হয় না। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, খুব কম সময়ে সিদ্ধান্ত নিলেও তা সঠিক হয়। কোনও মৌমাছি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছে বা বিপদে পড়েছে এমনটা দেখা যায়নি।
তিলের থেকেও ছোট ব্রেন মৌমাছিদের, বলেছেন গবেষক ডা. অ্যান্ড্রু ব্যারন। পতঙ্গবিদের দাবি, ওইটুকু মস্তিষ্কে কীভাবে এত বুদ্ধির হাওয়া খেলে সেটাই আশ্চর্যের। মৌমাছিদের ব্রেন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা।
ওপার বাংলার মৌমাছি বন্ধুত্ব পাতিয়েছে এপার বাংলার সঙ্গে, টাকির কাছে সংসার যৌথ মৌ-পরিবারের
পতঙ্গবিদ ব্যারন বলছেন, মৌমাছিদের বুদ্ধি কতটা সেটা দেখতে গিয়ে নানারকম পরীক্ষা করা হয়েছে। সাত রকমের রঙের ও সুগন্ধের ফুল নিয়ে মৌমাছিদের নানাভাবে বিভ্রান্ত করতে গিয়ে অবাকই হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নীল, লাল, সবুজ, সাদা নানা রঙের ফুল নিয়ে মৌমাছিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কোনও ফুলে ছিল টসটসে মধু, কোনওটায় মিষ্টি পরাগ, কোনওটাতে আবার মিষ্টি করে বানানো টনিক, আবার কোনও ফুলে শুধুই মিনারেল ওয়াটার ভরে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। দেখা যায়, মৌমাছি জলভরা ফুলের উপর বসে চট করে বুঝে নেয় ফাঁদটা। সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যায় মধু ভরা ফুলের দিকে। দু’বারও ভাবে না যে ফুলের ভেতরটা খতিয়ে দেখবে কিনা। এই গোটা সিদ্ধান্ত নিতে তাদের সময় লাগে ০.৪ সেকেন্ড। মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব!
যেমন ভাবা তেমনই কাজ–এটাই হল মৌমাছি সমাজের মূলমন্ত্র। দ্বিধা-দ্বন্দ্বের জায়গাই নেই। বিপদে পড়লেও তাদের উপস্থিত বুদ্ধি বারে বারেই অবাক করেছে বিজ্ঞানীদের। মৌমাছিদের শত্রুর শেষ নেই। বিষ হুল নিয়ে বোলতারা মৌমাছিদের আক্রমণ করে, ভয়াল মাকড়সা জাল পেতে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, তাছাড়া শিকারি পাখিরা নানারকম ফন্দি করে মৌমাছিদের ঘায়েল করার চেষ্টা করে। মৌমাছিরা কিন্তু বিপদ বুঝলে সঙ্গে সঙ্গে বাঁচার উপায় ভেবে নিতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, খুব বেশি বিভ্রান্ত হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে তাদের এক থেকে দেড় সেকেন্ড লাগে। এর বেশি নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, একদল মৌমাছিকে যদি একটা পাহাড়ের একপাশে রাখা হয় আর তাদের জন্য খাবারের একমাত্র উৎসটি রাখা হয় পাহাড়ের অন্য পাশে, তাহলেও নাকি বিভিন্ন কোণ বরাবর যেতে যেতে ওরা ঠিকই পৌঁছে যাবে খাবারের কাছে।