শেষ আপডেট: 22nd July 2024 17:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: আজন্ম লালিত সংস্কার ও বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে উৎসবে মেতে উঠল পাশাপাশি চারটে গ্রাম। বিষধর সাপই এখানে জীবন্ত দেবী। মঙ্গলকোটের মশারু, পলসোনা, ছোটপোষলা ও বড়পোষলা গ্রামে দেবী ঝাঁকলাই বা মা ঝঙ্কেশ্বরী নামে পুজো পায় বিষধর সাপ। প্রায় পাঁচশ বছরের প্রাচীন এই পুজো ঘিরে মেতে উঠল এই চারটে গ্রামের মানুষ। ভিড় জমেছে আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদেরও।
ঝাঁকলাই দেবী গ্রামের রাস্তায়, বাড়ির উঠোনে, ঘরের আনাচে কানাচে অনায়াসে ঘুরে বেড়ায়। মানুষের সঙ্গে সাপের এক অদ্ভুত সখ্য এখানে। এখানকার এই বিশেষ সাপ দেখতে বিষধর কেউটে প্রজাতির হলেও নির্বিষ বলেই গ্রামবাসীদের বিশ্বাস। কালো মাথার পিছন দিকে একটি চক্র আছে। ল্যাজের দিকটা একটু কাটা, কিন্তু গতি শ্লথ। এই সাপ ছোবল দিলেও কেন ক্ষতি হয় না, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, দু-দশক ধরে সর্প বিজ্ঞানীরা গ্রামে এসে পরীক্ষা করলেও সাপ ধরে ল্যাবরেটোরিতে নিয়ে যেতে পারেননি। গ্রাম্য বিধিতে এখানে সাপ ধরা বা মারা যাবে না। এই চার গ্রামে বেদে সম্প্রদায়ের প্রবেশ নিষেধ। কেউ যদি সাপ মারে তার জরিমানা করা হয়। গ্রামবাসীদের দাবি, এখানকার সাপ কাউকে সহজে ছোবল দেয় না। যদি কখনও সাপ কোনও গ্রামবাসীকে দংশন করেও, তাহলে তাকে দেবীর প্রসাদ মনে করে দেবীর নামাঙ্কিত একটি পুকুরের মাটি ও জল ক্ষতস্থানে লাগিয়ে নিতে হয়। তাতেই সুরাহা হয়।
গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, অনেক বিপদ এমনকী প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে গ্রামবাসীরা রক্ষা পায় ঝাঁকলাই দেবীর কৃপায়। । ঝাঁকলাই দেবীর নামের সঙ্গে অনেক লোককথাও মিশে আছে। শাস্ত্রীয় মতে, এই সর্পদেবী আদতে কালনাগিনী। মনসামঙ্গলের কাহিনি অনুসারে লখিন্দরকে দংশনের পর বেহুলার শাপে কালনাগিনী নির্বিষ সাধারণ সাপ হিসেবে মর্ত্যে বসবাস করছে।
জানা যায়, দেবীর স্বপ্নাদেশে আনুমানিক ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে পলসোনার ভূমিপুত্র পণ্ডিত মুরারি চক্রবর্তী ঝাঁকলাই দেবীর প্রস্তর মূর্তি মাঠ থেকে তুলে এনে গ্রামে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন। আষাঢ় মাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ তিথিতে সাপকে সিঁদুর মাখিয়ে দুধ ও ফুল দিয়ে পুজো করা হয়। বাড়ির উঠোন, শোবার ঘর, রান্না ঘর, ঠাকুর ঘরেও ঝাঁকলাইয়ের অবাধ যাতায়াত। এই চার গ্রামে অন্য কোনও প্রজাতির সাপের দেখা মেলে না। বাসিন্দাদের দাবি, রাতে দেবী ঝাঁকলাই রাস্তায় বের হয় না। তাই মানুষও বিপদে পড়ে না। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর এই প্রবাদকে আঁকড়ে সাপের সঙ্গে গ্রামের মানুষের সহবাস চলছে যুগের পর যুগ।