শেষ আপডেট: 5th December 2024 00:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে মৃত্যু হল এক তরুণীর। নাম দীপ্তি ঘোষ (১৭)। তাঁকে ৩ ডিসেম্বর, ওই হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন। জানা গিয়েছে, কাটোয়া থানার অগ্রদ্বীপের বাসিন্দা ওই তরুণী জ্বরে ভুগছিলেন। ২ তারিখ রাতে বাড়াবাড়ি হওয়ায় ৩ তারিখ ভোরের দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের সুপার ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার।
হাসপাতালে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানা যায়, জ্বর নিয়ে অনেকেই কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের সকলকেই বুধবার সকালে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। সেই ইঞ্জেকশন শরীরে যাওয়ার পর থেকেই অসুস্থ বোধ শুরু করেন দীপ্তি-সহ আরও এক কিশোরী। দীপ্তির অবস্থা খারাপ হতে শুরু করায় পরিবারের লোকজন চিকিৎসককে খবর দিলে কারও দেখা মেলেনি। এই অবস্থায় তরুণীর জিভ বেঁকে যাচ্ছিল বলেও জানা যায়। পরিবার তাঁকে সেখান থেকে বর্ধমান স্থানান্তর করার আবেদন জানালেও কেউ শোনেনি বলে অভিযোগ। ওই অবস্থায় চিকিৎসকরাও কেউ আসেনি।
পরিবারের অভিযোগ, রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে, একথা হাসপাতালে জানানো হলে তাঁরা পাল্টা হুমকি দিতে থাকেন। রোগীর বাবাকে হাসপাতালে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। মেয়ের মৃত্যুর পর বুধবার হাসপাতালে নার্স ও কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এবিষয়ে হাসপাতালেরই এক রোগী বলেন, 'আমাদের সবাইকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। সকালে দেওয়া হয়। এখানে আরও একটা বাচ্চা মেয়েকেও দেওয়া হয়েছিল। ওরও অ্যালার্জি বের হয়। ওর বাবা-মা নিয়ে গিয়ে দেখায়, তারপর পাল্টায়। এই ইঞ্জেকশন দেওয়া পর ওর অবস্থা খুব খারাপ হয়, জিভ বেঁকে যায়। বাড়ির লোক নিয়ে যেতে চাইলেও ছাড়া হয়নি। ইঞ্জেকশন দেওয়ার ফলই হয়েছে। এই ঘটনার পর ইঞ্জেকশনের শিশিগুলিও আর পাওয়া যায়নি।'
মৃতার বাবা বলেন, 'আমার মেয়ের জ্বর। ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করেছিলাম রাতে। ইন্দ্রনীল মল্লিকের হাতে পড়ে। উনি চিকিৎসা করেন। উনি বলছিলেন সব ঠিক হয়ে যাবে। বারবার ও বলছিল, হাতে ব্যথা, পায়ে ব্যথা। আমার স্ত্রী বলতে গেলে তাঁকে ধমক হয়। আমাকে ঢুকতে দেয়নি গার্ড। হাত ধরে টেনে বের করে দিয়েছে। আমি কাঁদছিলাম গাছতলায় বসে। ও বারবার বলছিল বাবা আমায় বাড়ি নিয়ে চলো। আজ সকাল থেকে অস্বস্থি হচ্ছিল। যন্ত্রণা হচ্ছিল। আমি গেলাম। আমার কাছে কার্ড ছিল। আমাকে ঢুকতে দিল না। বলল ১১টার পর ঢুকবে। আমাকে হুমকি দিয়েছে। আমাকে ঢুকতে দিল না। গিয়ে দেখলাম ছটফট করছে। আমরা সবাইকে রিপোর্ট করেছি বারবার। কেউ দেখেনি। সবাই গরম দেখাচ্ছে। রাগ দেখাচ্ছে। সেলাইনও খোলেনি। কেউ দেখেনি, আসেনি। আর কোনও ডাক্তার আসেনি। একবার সকালে শুধু দেখেছে। আমি বলার পরও কাউকে ডেকে দেওয়া হয়নি।'
সমস্ত অভিযোগ শুনে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সুশান্ত বরণ দত্ত বলেন, 'যেকোনও মৃত্যু দুঃখজনক। একটা কাঁপুনি ছিল, সঙ্গে জ্বর ছিল ওর। পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তি পাবে।'