শেষ আপডেট: 15th April 2025 18:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: ইটভাটা শ্রমিকের সন্তানদের শিক্ষার দিশা দেখাচ্ছে সোমেশের বিনে পয়সার পাঠশালা।সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি খুইয়েছেন রাজ্যের কয়েক হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা। সেই কারণে এখন শিক্ষকের আকালে ধুঁকছে জেলার বহু সরকারি শিক্ষাঙ্গন। বেশ কিছু শিক্ষাঙ্গনে আবার তালা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছে। তবে এসব কিছুই প্রভাব ফেলতে পারেনি পূর্বস্থলীর ইটভাটার পাঠশালায়। নিঃস্বার্থে হতদরিদ্র পরিবারের শিশু সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আনার কাজে অবিচল রয়েছে সোমেশ মণ্ডলের পাঠশালা। অখ্যাত এই পাঠশালাটিই বিখ্যাত শিক্ষানুরাগী মানুষজনের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
শিক্ষক সোমেশ মণ্ডলের বাড়ি পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের নিমার গ্রামে। পূর্বস্থলীর নীলমণি ব্রহ্মচারী ইনস্টিটিউশনের ইংরেজির শিক্ষক তিনি। প্রায় এক দশক আগের কথা। বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই দেখতেন ইটভাটায় কর্মরত ভিন রাজ্যের শ্রমিকের শিশু সন্তানরা হেলায় ধুলো মাখছে। শিক্ষার আলো থেকে অনেক দূরে থাকা শিশুগুলি নজর কাড়ে তাঁর। ওই শিশুদের শিক্ষার আলোয় আনার ভাবনা জাগে মনে।
সময় নষ্ট না করে তিনি হিন্দি জানা এলাকার ছাত্র-ছাত্রী সুদীপ্ত ঘোষ,অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায়,সুলতানা খাতুন,প্রদীপ অধিকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদেরকে তিনি ইটভাটায় পাঠশালা চালু করা সংক্রান্ত তাঁর ভাবনার কথা জানান এবং সহযোগিতা চান। হিন্দি জানা ছাত্র-ছাত্রীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই পূর্বস্থলীর মসজিদ পাড়ার ইটভাটাতে সোমেশ শুরু করেন বিনে পয়সার পাঠশালা।
ইটভাটার শ্রমিকরা যেহেতু হিন্দিভাষী তাই পাঠশালায় তাঁদের ছেলে মেয়েদের পড়ানো হয় হিন্দিতে। ইংরাজিও পড়ানো হয়। ইটভাটা শ্রমিকের ছেলে-মেয়েদের পাঠশালায় আসার আগ্রহ বাড়াতে রংবাহারি বইয়ের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি টিফিনের ব্যবস্থাও করা হয়। এরজন্য সোমেশবাবু কখনও নিজের পকেট থেকে পয়সা খরচ করেন,আবার কখনও কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও শিক্ষানুরাগী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এইভাবে সপ্তাহে তিন-চারদিন চলা পাঠশালাটি আজ ইটভাটা শ্রমিকদের ছেলে মেয়েদের কাছে প্রাণের পাঠশালা হয়ে উঠেছে। ইটভাটা মালিকপক্ষও তা দেখে মুগ্ধ। তাঁরা ইটভাটার গাছতলায় চলা পাঠশালায় বসার জায়গাটি কংক্রিট করে বাঁধিয়ে দিয়েছেন। তার সাথে তাঁরা সেখানে ব্ল্যাক বোর্ডও তৈরি করে দিয়েছেন। বর্তমানে পাঠশালায় পড়ুয়া সংখ্যা ৫০ ছুঁইছুঁই।
সোমেশ মণ্ডল বলেন, “বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসা শ্রমিকরা ইটভাটায় কাজ করেন। তারা সকলেই হিন্দিভাষী।অক্টোবর মাসে পূর্বস্থলীর ইটভাটায় চলে এসে কাজে যোগ দেন। টানা জুন মাস পর্যন্ত কাজ করে নিজেদের দেশের বাড়িতে ফিরে যান। এই দীর্ঘ সময় পড়াশোনার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকে না শিশুগুলির। সেটা দেখেই ইটভাটার গাছতলায় পাঠশালা খুলে তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করি।"