পটেশ্বরীর পুজো
শেষ আপডেট: 12th September 2024 13:55
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: এক সময়ে পুজোর দিনগুলিতে রাজবাড়ির মন্দির গমগম করত দর্শনার্থীদের ভিড়ে। সেই সময়ে রাজ পরিবারের মহিলাদের প্রকাশ্যে আসার অনুমতি ছিল না। দেবীদর্শনের জন্য গোপন পথে মন্দির-চত্বরে প্রবেশ করতেন তাঁরা। মন্দিরের দোতলায় আড়াল থেকে পুজো দেখতেন। সে সব এখন অতীত।
রাজা ও রাজপাট দুই এখন নেই। রয়ে গেছে শুধু ঐতিহ্য। ভগ্নপ্রায় নাটমন্দিরে দেবীদুর্গা এখানে পটে বিরাজমান। পুজো আসতে হাতে একমাসও বাকি নেই। তাই বর্ধমান রাজবাড়ির লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর ঠাকুরদালান সেজে উঠছে। সেখানেই হবে রাজপরিবারের পটেশ্বরীর পুজো।
সাড়ে তিনশ বছর পেরিয়েছে পুজোর। মহারাজ মহতাব চাঁদের আমল থেকে পুজোর সূচনা হয়। শালকাঠের একচালার কাঠামোতে রঙ, তুলি দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল দশভুজার রূপ। লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক থাকলেও পটে নেই গণেশ। দেবীর বাহন সিংহ নয়, ঘোড়া। মহিষাসুরের অভিব্যক্তি এতোটাই নিখুঁত যে দেবীর অসুরবধের পর্বকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে। পটের চারিপাশের নকসায় রয়েছে শিবপাবর্তীর লোকগাঁথা। দশবছর অন্তর একবার পটেশ্বরী দুর্গা রঙ করা হয়।
দুর্গাপুজোর সময়ে রাজবাড়ি ঠাকুরদালানে ভিড় উপচে পড়ে। এখন ট্রাস্টের মাধ্যমেই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করে। মহালয়ার পরের দিন থেকে বর্ধমানের মহারাজার মন্দিরে দুর্গাপুজো শুরু হয়। বলির প্রথাও আছে। তবে ছাগ বা মোষ বলি নয়, চাল-কুমড়ো বলি হয়। রাজার আমলে সুপারি বলি হতো। অষ্টমীতে পটেশ্বরীর সামনে নবকুমারী পুজো হয়। পুজোর সময়ে রাজপরিবারের একমাত্র বংশধর প্রণয়চাঁদ মহতাব সস্ত্রীক থাকেন। তাছাড়া কয়েকবছর ধরে নবমীর রাতে এই মন্দিরের স্থানীয় গুজরাতি সম্প্রদায়ের মানুষ ডান্ডিয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
মন্দিরের প্রধান পুরোহিত উত্তম মিশ্র জানিয়েছেন, লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর মন্দিরের পাশেই একটি ভিন্ন মন্দিরে পটেশ্বরীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তবে সংস্কারের অভাবে মন্দির জীর্ণদশায় পড়ে রয়েছে। ফলে দেবীর পট লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরেই স্থাপন করা হয়েছিল।
মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের দাবি, জাঁকজমক করে রাজা মহতাব চাঁদের আমলে পটেশ্বরী দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। নদীর পেরিয়ে পুজো দেখতে আসতেন অনেকেই। উৎসবের দিনে লোকজনে গমগম করত লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর মন্দির।