শেষ আপডেট: 3rd February 2025 19:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: সরস্বতী পুজোয় ঘটে গেল বড় রকমের ‘ভাষা বিপ্লব’। পূর্ব বর্ধমানের মশাগ্রামের সারদা মিশন স্কুলে সংস্কৃত মন্ত্রের পরিবর্তে সরস্বতীর আরাধনা হল সম্পূর্ণ বাংলায় লেখা মন্ত্রে। এই ঘটনা চাক্ষুষ করতে এসেছিলেন ভাষাবিদ পবিত্র সরকার। পবিত্রবাবুর কথায়, শহর থেকে দূরে বাংলায় মন্ত্রোচ্চারণ করে সরস্বতী পুজো একটা অভিনব ঘটনা তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এটা যেন ভাষা বিপ্লব।
স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে কবিতার ছন্দে সংস্কৃত মন্ত্রের অনুবাদ করেছেন কবি মারুত কাশ্যপ। প্রথমবার বাংলায় অঞ্জলি দিয়ে ছাত্রীরা জানাল এর আগে মানে না বুঝেই অঞ্জলি দিয়েছে। এই প্রথম মানে বুঝে সরস্বতী আরাধনা করল তারা।
সেই মন্ত্র এরকম—
বিষ্ণু যেমন পুষ্টিদাতা
গৌরী যেমন তৃপ্তিদাত্রী
দেবী তুমি আগলে রাখো আমাকে দিনরাত্রি
সারদা মিশনের অধ্যক্ষ চন্দন সাঁধুখা বলেন, "মাকে নিজের ভাষায় ডাকতে পারার আনন্দই আলাদা। আমরা মন্ত্র যে ভাষাতেই বলি, প্রার্থনা কিন্তু নিজের ভাষা বাংলায় করি। এবার এই মন্ত্রোচারণও বাংলায় হোক সেটাই চেয়েছিলাম। এই কাজ কে করতে পারেন তা নিয়ে দীর্ঘ চিন্তাভাবনা ছিল। পরে কবি মারুত কাশ্যপকে সেই দায়িত্ব দেই। খুব কাছ থেকে দেখেছি, কী নিষ্ঠায় এই কাজটা করেছেন তিনি। বিসর্জনের শ্লোকগুলি অনুবাদের সময়ে থমকে গিয়েছিল কাজ। কেঁদেছিলেন কবি। বলেছিলেন এত যত্নে গড়া প্রতিমার বিসর্জন দেব কী করে! রাতের পর রাত ঘুমোতে পারেননি তিনি। অবশেষে শেষ হল বাংলায় সরস্বতী মন্ত্র।
অনুবাদক মারুত কাশ্যপ জানান, প্রথমে অনেক দ্বিধা নিয়েই কাজ হাত দিয়েছিলেন। তবে যত এগিয়েছে, তৃপ্তি বেড়েছে। তাঁর কথায় আমি তো নিত্য পুজোপাঠ করি না। মন্ত্রের অনুবাদ করতে গিয়ে অনুভব করতে হয়েছে প্রতিটা শব্দ। অনেক সময় পারিনি। আরও কত বই ঘাঁটতে হয়েছে একটা শব্দের মানে বোঝার জন্য। মন্ত্রগুলিকে ছন্দে গেঁথেছি মন্ত্রের মাধুর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য।'
সারদা মিশন স্কুলে বাংলায় মন্ত্রোচারণ করে দেবী আরাধনার সময় সেখানে উপস্থিত ভাষাবিদ পবিত্র সরকার। তাঁর কথায়
পুজোপাঠ আমি অতশত না মানলেও এটা একটা বড় ঘটনা। মারুতকে অভিনন্দন এ কাজে হাত দেবার জন্য। আসলে যা আমরা বুঝি তা অনুভবে সুবিধা হয়। যা বুঝি না তার বেশিরভাগটাই অদেখা থেকে যায়। সারদা মিশন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ এইরকম একটা অনুভব তৈরির জন্য। সত্যিই অভাবনীয় ঘটনা।"
স্কুলের চৌহদ্দিতে পড়ুয়াদের উৎসাহও বুঝিয়ে দিল সত্যিই অভাবনীয় একটা ঘটনা ঘটিয়েছে মশাগ্রামের সারদা মিশন। এই প্রথম বাংলায় অঞ্জলি দিতে পেরে অন্য অনুভবের শরিক স্কুলের সব ক্লাসের ছাত্রীরাই। রীতিমতো কলকোলাহলে সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল তারা। তাঁদের এমন প্রতিক্রিয়ায় আরও খুশি স্কুলে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা।