শেষ আপডেট: 28th January 2025 18:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: সুতানুটির রটন্তী এখন পূজিতা হচ্ছেন শহর বর্ধমানে। মঙ্গলবার থেকে মহা ধূমধামে শহরের খোসবাগান রামকৃষ্ণ রোডে শুরু হয়েছে উৎসব। পারিবারিক পুজো হলেও এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এখন তা সর্ব্বজনীন রূপ নিয়েছে।
এখানে দেবীর পুজোয় কারণবারি নিষিদ্ধ। কাঁসার গ্লাসে দেওয়া হয় নারকেলের জল। পাঁচ রকম ভাজা, পাঁচ রকম ডাল ও পাঁচটি তরকারি দিয়ে দেওয়া হয় পুজোর ভোগ। এখানে দেবীর ছবি তোলাও নিষিদ্ধ।
কথিত আছে, ১৬২৮ সালে কাটোয়ার জামরা গ্রামের গঙ্গাধর বন্দ্যোপাধ্যায় সংসারে চরম অশান্তির কারণে রোজগারের তাগিদে ঘর ছাড়েন। সেই সময় তিনি হাজির হন সুতানুটিতে। যা বর্তমানে কলকাতা। প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হওয়ায় একটি বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নেন। বাড়ির বৃদ্ধা জানালা খুলে তাঁর সঙ্গে আলাপ জমান। পরে গঙ্গাধরের দুর্দশার কথা শুনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ওই বৃদ্ধা। ওই বৃদ্ধাকে গঙ্গাধর মা বলে ডাকলে তিনি আপ্লুত হয়ে গঙ্গাধরকে আশ্রয় দেন। ব্যবসা করার জন্য ওই বৃদ্ধা তাঁকে কিছু টাকাও দেন। সেই টাকা নিয়ে গঙ্গাধর ঘিয়ের টিনের কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসা চলাকালীন ওই বৃদ্ধার বাড়ির মাটি খুঁড়ে কিছু মোহর পান। সেগুলি তিনি বৃদ্ধার কাছে নিয়ে আসেন। সেই মোহর উদ্ধার করে দুই ঘড়া আত্মীয়দের মধ্যে বিলি করতে বলেন বৃদ্ধা। বাকি এক ঘড়া মোহর বৃদ্ধা তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করার কাজে খরচ করতে বলেন।
গঙ্গাধর বৃদ্ধার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। বৃদ্ধার মৃত্যুর পর গঙ্গাধর তাঁর ঘরে রটন্তী দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকেই উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি পেতে থাকে গঙ্গাধরের পরিবারের। তার কিছুদিনের মধ্যে গঙ্গাধরকে বর্ধমানের মহারাজ চৌধুরি উপাধিতে ভূষিত করেন। গঙ্গাধরের পর তাঁর মেয়ে পুজোর ধারা বজায় রাখেন। এখন তাঁর বংশধররাই ফি বছর এই পুজো করে আসছিলেন। পরে গ্রামে দেবীর সম্পত্তি লুঠ করে নেয় ডাকাতরা। তারপর থেকে গঙ্গাধরের বংশধররা দেবীকে বর্ধমানে এনে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকেই সুতানুটির দেবী পূজিতা হচ্ছেন বর্ধমান শহরে।
বর্তমানে তাঁদের উত্তরসূরী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে খোসবাগানে এই পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথা মেনেই আজও আরাধনা হয় রটন্তীদেবীর।