অনাদরের কচুরিপানায় তৈরি হচ্ছে ট্রে-টুপি-মানিব্যাগ
শেষ আপডেট: 12 February 2025 12:29
চন্দন ঘোষ
গ্রাম বাংলার খাল বিল জুড়ে থাকে অনাদরের কচুরিপানা। এমনকী এখন বহমান নদীতেও ভেসে যেতে দেখা যায় কচুরিপানার দাম। বেগুনি ফুল যতই নয়নাভিরাম হোক না কেন আদতে কচুরিপানা আবর্জনা হিসেবেই চিহ্নিত। মূর্তিমান এই উপদ্রবে এতদিন নাজেহাল ছিলেন পূর্বস্থলীর বাঁশদহ বিল- চাঁদের বিলের মাছ চাষিরা। সেই কচুরিপানাকেই এবার শিল্পের স্তরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ দেখা গেল বর্ধমানে।
কচুরিপানা থেকে শিল্প। হ্যাঁ, এমনটাই হতে চলেছে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী এলাকায়। এমনিতেই কালনা মহকুমার পূর্বস্থলী হস্তশিল্পের কেন্দ্রভূমি। এখানে দীর্ঘদিন ধরে তাঁতশিল্পের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এখন নানা কারণে তাঁতশিল্পে প্রচন্ড প্রতিযোগিতা। তাই বিকল্প পথের সন্ধানে এখানে নানারকম বিকল্প চাষ, মাছ চাষ এবং হস্তশিল্পের প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চলছে। আর তা করতে গিয়েই বেড়ে গেল কচুরিপানার গুরুত্ব। উদ্যোগ নেওয়া হল কচুরিপানা থেকে বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরির। কচুরিপানা থেকে তৈরি জিনিসের মধ্যে রয়েছে ট্রে, টুপি,কোস্টার, যোগাম্যাট, ব্যাগ, মানিব্যাগ ইত্যাদি। এজন্য শান্তিনিকেতন থেকে ২০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁরাই পথ দেখাচ্ছেন।
রাজ্যের প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, পূর্বস্থলীতে কচুরিপানা থেকে নানা ধরণের শিল্প সামগ্রী তৈরির প্রকল্প নিয়েছেন তাঁরা। পরিকাঠামো সম্পূর্ণ। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার পথে। যদি এই কাজ ঠিকভাবে এগোয় বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। একই সঙ্গে কচুরিপানার সমস্যা থেকেও মুক্তি মিলবে।
মনে করা হয় কচুরিপানার অর্কিড-সদৃশ ফুলের আকর্ষণে সৌন্দর্যপ্রেমিক এক ব্রাজিলীয় পর্যটক আঠেরোশো শতাব্দীর শেষভাগে বাংলায় কচুরিপানা নিয়ে আসেন। তারপর তা এত দ্রুত বাড়তে থাকে যে ১৯২০ সালের মধ্যে বাংলার প্রায় প্রতিটি জলাশয় কচুরিপানায় ভরে যায়। নদ-নদীতে চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে আর জলাভূমির ফসল আমন ধান আর পাট চাষ অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার কচুরিপানার দৌরাত্ম্য হ্রাসে বাংলার জলাভূমি আইন, বাংলার মিউনিসিপ্যালিটি আইন, বাংলার স্থানীয় সরকার আইন এবং বাংলার স্থানীয় গ্রাম সরকার আইন সংশোধন করে। কচুরিপানার বিস্তার ও ধ্বংসপ্রণালী নির্ধারণ করার জন্য ১৯২১ সালে বাংলার সরকার একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন স্যার জগদীশচন্দ্র বসু। নবগঠিত কমিটি কচুরিপানার বিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু আইন প্রণয়নের পরামর্শ দেন। তাঁরা জানিয়েছিলেন, সমবেত চেষ্টায় জল থেকে কচুরিপানা তুলে ধংস করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে সবগুলো দলের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাকে কচুরিপানার অভিশাপ-মুক্ত করার অঙ্গীকার ছিল। প্রায় একশো বছর পরেও কচুরিপানার সমস্যা থেকে মুক্ত নয় বাংলা। সেই কচুরিপানাকেই এবার অন্যভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হল।