শেষ আপডেট: 16th October 2024 19:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কাচা পাকা বাড়ি চারিদিকে। রোজকারের মতো স্কুলে যাচ্ছে বাড়ির ছেলেমেয়েরা। অফিস বা নিত্যদিনের কাজে ব্যস্ত বাড়ির বড়রা। কাজ সেরে দুপুরে বারান্দায় গল্প মা-ঠাকুমাদের। সকালের চিত্রটা এমন থাকলেও বিকেল গড়ালেই সব শুনশান। ছুঁচ পড়লেও যেন আওয়াজ পাওয়া যাবে। তখন শুধুমাত্র জেগে থাকতেন একজন, গ্রামের রক্ষক, সকলের আরাধ্য মা লক্ষ্মী। গ্রামের চিত্রটা ধীরে ধীরে পাল্টেছে। আগে সন্ধে বেলা নিস্বব্ধ থাকত গ্রাম, এখন গোটা গ্রামই জনমানব শূন্য। আশাপাশের গ্রামের কান পাতলেই শোনা যায় হাড়হিম করা গল্প। তবে, গল্প যেমনই হোক, মা লক্ষ্মী কিন্তু এখনও এই গ্রাম রক্ষায় অতন্দ্রপ্রহরী। তাই আজকের দিনে মায়ের আরাধনার জন্য ফের আসানসোলের কুলটির বেনাগ্রামে ফেরেন এখানকার পুরনো বাসিন্দারা।
প্রায় ২০-২২ বছর আগের কথা। ইলেক্ট্রিক না আসা, ওয়াগন ব্রেকারের ঝামেলা, এলাকায় ট্রেন-বাসের স্টপেজ না থাকা, মহিলাদের নিরাপত্তা না থাকা, যাতায়াতে সমস্যা-সহ একাধিক ঝামেলার জন্য গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন বেনাগ্রামের লোকজন। কিন্তু তাঁদের এক সুতোয় বেঁধেছিলেন একজনই। গ্রামের মা লক্ষ্মী। তিনিই বছরের পর বছর তাঁদের রক্ষা করে গেছেন। তাই মা একা থাকবেন? প্রতিদিনই মায়ের আরাধনা করেন গ্রামের লোকজন। আর পুজোর দিন? যে যেখানেই থাক, ঠিক এসে উপস্থিত হন এই গ্রামে।
মায়ের ভরসাতেই তো ছেড়ে গেছেন জমি জায়গা। তাঁরও নতুন মন্দির হয়েছে। সেই মন্দিরের পুরোহিত রোজই পুজো দিতে আসেন পাশেরই এক এলাকা থেকে। ফের নতুন করে গ্রাম সেজে উঠবে। মানুষ ফিরবে, এমন স্বপ্নও দেখেন। ভূতের গুজব ফুৎকারে উড়িয়ে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, 'ভয়ই লাগে না।' ভূতের কথা জিজ্ঞাসা করতে সাফ উত্তর, 'এখানে ওসব কিছু নেই।'
লক্ষ্মীপুজো, তাই গ্রামে এসেছেন আরেক বাসিন্দা। তিনিও ভূতের বিষয়ে আমল দিতে রাজি নন। তাঁর কথায়, 'চলে গেছি তার প্রধান কারণ জল, কল, বিদ্যুৎ, রাস্তা, বাস স্টপেজ না থাকা। এই সব। আমি মানি না ভূতের গল্প। এটা রটিয়েছে কেউ। ওয়াগন ব্রেকারও একটা সমস্যা। ভূত বলে কোনও জিনিস নেই। ভূত ধরার জন্য অনেকেই এসেছে। কেউ কোনও ভূত দেখতে পায়নি। নিরাপত্তার সমস্যাও হত এখানে একসময়ে। লাইট নেই, বাস স্ট্যান্ড নেই। এভাবে থাকা সম্ভব?'
ভূতের গল্প গুজব! এই কথায় শিলমোহর দিলেও আরেক বাসিন্দা মলয় মাঝি বলেন, 'ভূতের ভয় তো লাগতই।' তবে তিনিও ভূতের ভয়ের থেকে বাস্তবের নিত্য সমস্যাগুলোকেই তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই এখনই, সবাই সবার মতো বাড়ি বানিয়ে নিয়েছে। বিদ্যুতের জন্য তো হয়েছেই এই সমস্যা। ভূতের উপদ্রবও ছিল। যাতায়াতের সমস্যাও কম ছিল না। একার পক্ষে এখানে এসে থাকা এখনই সম্ভব না। গ্রামের সবাই যদি একসঙ্গে ফিরে আসে, তাহলে আমরাও আসতে পারি। বিদ্যুত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপর দেখা যাক কী হয়।'
গল্প যেমনই হোক, আজ কোজাগরী লক্ষ্মীর পুজোর দিন বেনাগ্রামের সবাই জেগে। এই একটা দিন রাত জেগে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করে তারা। এই একটা দিন, মায়ের সেবায় সব ভুলে এক জায়গায় এসে জড়ো হয় তারা।