শেষ আপডেট: 1st December 2024 16:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কাটোয়া শহরের বাসিন্দাদের জন্য পাগলি মা কালীর পুজো (Katwa Kali Puja) যেন এক আবেগের নাম। অগ্রহায়ণ মাসের অমাবস্যা তিথিতে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। শহরের শ্মশানঘাটে পড়ে থাকা জিনিসপত্র দিয়ে মণ্ডপ বেঁধে পুজো করা হয় প্রতি বছর। সাধক বামাখ্যাপার আত্মীয়দের হাতেই বাঁধা এই পুজো।
পাগলি মা কালীর আবির্ভাব কীভাবে হল কাটোয়ায়?
জানা যায়, ১৩৭৪ বঙ্গাব্দে কাটোয়া শহরের ভাগীরথী নদীতে স্নান করার সময়, অনিল দাস, বৈদ্যনাথ সাহা ও তারা দাস নামে তিনজন বন্ধু নদীর স্রোতে ভেসে আসা একটি কাঠামো দেখতে পান। বারবার সরানোর চেষ্টা করেও কাঠামোটি তাঁদের কাছে ফিরে আসে। শেষে অনিলবাবু কাঠামোটি পাড়ে তুলে রেখে যান। সেই রাতে তিনি মাকে পুজো করার স্বপ্নাদেশ পান।
এর পরের দিন তিন বন্ধু তারাপীঠে গিয়ে সাধক বামাখ্যাপার আত্মীয় উমাপদ রায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের গল্প শুনে উমাপদবাবু নির্দেশ দেন কাঠামোতেই পুজো করতে। সেই পুজো তিনি নিজেই পরিচালনা করেন।
আজও উমাপদবাবুর পরিবারের সুখেন্দু বিকাশ রায় এই পুজোর পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করছেন। পুজোটি তন্ত্রমতে পরিচালিত হওয়ায় এর সঙ্গে বামাখ্যাপার সরাসরি সংযোগ রয়েছে। সাধক বামাখ্যাপার পরিবার এখনও এই পুজোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
পাগলি মা কালীর পুজোতে শ্মশানঘাটের আধপোড়া কাঠ এবং ফেলে যাওয়া দড়ি ব্যবহার করে মণ্ডপ বাঁধা হয়। তন্ত্রমতে সম্পন্ন হয় পুজোর সব আচার-অনুষ্ঠান। এটি ৫ দশক ধরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে গভীর বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে এবং উন্মাদনার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
প্রতি বছরই পাগলি মা কালীর পুজো কাটোয়ার বাজার ঘাটে আয়োজিত হয়। এবছরও সেই মতো শনিবার থেকে পুজো ঘিরে উন্মাদনা শুরু হয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক সোমনাথ সাহা জানান, নিয়ম মেনেই পুজোর আয়োজন চলছে।
স্থানীয়দের দাবি, পাগলি মা কালীর পুজো কাটোয়ার একটি অমূল্য ঐতিহ্য। এটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং শহরের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতীক।
পাগলি মা কালীর পুজো শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি স্থানীয় মানুষদের জন্য একটি মিলনক্ষেত্রও। পুজো ঘিরে সকলের মধ্যে উচ্ছ্বাস এবং আন্তরিকতা চোখে পড়ার মতো। এক কথায় বলতে গেলে, কাটোয়ার মানুষের বিশ্বাস এবং ঐক্যের প্রতীক এই পুজো, শহরের মানুষের ঐতিহ্য, বিশ্বাস এবং আবেগের এক অনন্য নিদর্শন এই পুজো।