শেষ আপডেট: 7th November 2024 11:42
চন্দন ঘোষ, পূর্ব বর্ধমান
৬০ টাকায় মটন থালি খাইয়ে জনপ্রিয়তার দৌড়ে ক্রমশ সামনের সারিতে বর্ধমান শহরের পিসিমনির হেঁসেল। প্রতিদিন দুপুরবেলা ভাত খেতে মুচিপাড়ার এই দোকানে ভিড় করছেন বর্ধমান শহরের মানুষ। প্রায় প্রতি দুপুরেই পাত পড়ছে দেড়শো থেকে দুশোজনের। যাঁরা প্রতিদিন খাচ্ছেন, তাঁরা তো বটেই, কোনও কাজে এসে যারা একদিন খেতে ঢুকছেন রান্নার গুণেমানে উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারছেন না তাঁরাও।
পিসিমনি, অর্থাৎ সারথী দত্ত। এক সময় লড়াকু নেত্রী ছিলেন শাসকদলের। কিন্তু এখন তার ধ্যানজ্ঞান এই হেঁসেল। সকাল থেকে জ্বলে ওঠে উনুন। দম ফেলার ফুরসত থাকে না তারপর। বেলা গড়ালেই যে ভিড় লেগে যায়। দিনের বেলাটা পুরোপুরিই থাকে মাছ আর মাংসভাতের আয়োজন। আর বিকেলের পর থেকে মেলে রোল-পরোটা-বিরিয়ানি। যার যেমনটা চাই। তবে পিসিমনির হেঁসেলে হিট ৬০ টাকায় মটন থালি।
জানতে ইচ্ছে করছে তো কী কী থাকে এই মটন থালিতে! ভাত-ডাল-ভাজা-স্যালাড-দু'রকমের সবজি আর মটন। এমনকী চাটনি-পাঁপড়ও। সব মিলিয়ে জমজমাট আয়োজন। সারথী জানালেন,ছেলে-বৌমাদের নিয়ে এই ভাতের হোটেল শুরু করেছিলেন। তারপর কেটে গেছে পাঁচ-পাঁচটা বছর। তবে ৬০ টাকায় মটন থালির বয়স ১ বছর। সারথীর কথায়,"ব্যবসাতো করছিই, কিন্তু লোকজনকে খাওয়াতেও ভাল লাগে। তাই পরীক্ষামূলকভাবে এই থালি চালু করেছিলাম। এখন তাঁর টানেই আসছেন মানুষ।" তবে কী করে মাত্র ৬০ টাকায় মটন থালি খাওয়াচ্ছেন, সেটা সারথীর 'ট্রেড সিক্রেট'।
সারথী জানালেন, ৬০ টাকার মটন থালিতে একটাই মটনের টুকরো থাকে। আরেক টুকরো কেউ চাইলে দিতে হবে ১০০ টাকা। আর চিকেন থালির ক্ষেত্রে দু'টুকরো চিকেন থাকে, কেউ অতিরিক্ত নিতে চাইলে দিতে হবে ১১০ টাকা। মাছের থালিও ৬০ টাকা। থালিতে থাকে এক টুকরো মাছ। তবে সব কিছু ছাপিয়ে গেছে তার ৬০ টাকার মটন থালি।
বিকেল গড়ালেই অন্য আইটেম। থাকে রোল, চাউমিন, বিরিয়ানি ও চিকেন, মটনের নানা পদ। সেগুলি অবশ্য থালি সিস্টেম নয়। সেই খাবারের টানেও আসেন মানুষ। কারণ ক্রেতাদের মন বুঝে সেই খাবারের দামও নাগালের মধ্যেই রেখেছেন তিনি। পিসিমনির হোটেল হাসি ফুটিয়েছে ক্রেতাদের মুখেও। কাজেকর্মে এই এলাকায় যাদের নিত্য যাতায়াত তাঁদের অনেকেই এই হোটেলে দুপুরের খাবার খান প্রতিদিন। হঠাই একদিন যাঁরা আসেন তাঁরাও প্রেমে পড়েন অচিরেই।
সারথীর ছেলে অভিজিৎ দত্ত জানান, সাধারণ মানুষের ইচ্ছেপূরণ করতেই তাঁরা দাম এক জায়গায় ধরে রেখেছেন। কিন্তু খাবারের মানে কোনও আপোস করেননি। এই কারণেই হয়তো জনপ্রিয়তার গ্রাফ প্রতিদিন বাড়ছে পিসিমনির হেঁসেলের।