শেষ আপডেট: 15th December 2021 05:53
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক সমস্যা থাকলেও বিচারক হতে বাধা নেই। একটি মামলার শুনানিতে এমনটাই পর্যবেক্ষণ দেশের শীর্ষ আদালতের। বিচারপতিদের বক্তব্য, মানসিক রোগ যদি কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে জুডিশিয়াল দায়িত্ব পালনে কোনও সমস্যা হতে পারে না। স্পেশাল ক্যাটাগরিতে ছাড়পত্র দেওয়া যেতেই পারে। ২০১৮ সালে দিল্লি জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস করেছিলেন ভাব্য নইন। দিল্লি হাইকোর্টের বিচারকের পদে তাঁর নিয়োগপত্র বাতিল হয়ে যায় ২০১৯ সালে। আদালতের তরফে বলা হয়েছিল, তিনি মানসিকভাবে সুস্থ নন। কাজেই বিচারপক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে তিনি অপারগ। এরপরেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন সেই ব্যক্তি। এই সংক্রান্ত মামলা চলছিল গত কয়েকবছর ধরে। আজ বুধবার এই মামলার শুনানিতে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কৌল ও এমএম সুন্দ্রেশের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলছিল। বাইপোলার ডিসঅর্ডার নিয়ে জুডিশিয়াল বেঞ্চে নিয়োগ সম্ভব কিনা তা মেডিক্যাল বোর্ডের কাছে জানতে চেয়েছিল আদালত। দিল্লির এইমসে অভিজ্ঞ মনোবিদদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড। সেই বোর্ডের তরফে আদালতকে জানানো হয়, মামলাকারীর বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কাউন্সেলিং চলছে। তিনি অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন। তাঁর বর্তমান পরিস্থিতি স্থিতিশীল। বোর্ডের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই আবেদনকারীকে দিল্লিতে জুডিশিয়াল অফিসার হিসেবে নিয়োগের অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বাইপোলার ডিসঅর্ডার কী? বাইপোলার ডিসঅর্ডারের রোগীর মানসিক স্থিতি ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে তার আঁচ পাওয়া মুশকিল। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকের ক্ষেত্রে মনের এই রোগ প্রচণ্ড আনন্দ বয়ে আনে। সৃজনশীল মানুষদের ক্ষেত্রে এমনটা হতে দেখা গেছে। অন্তর্মুখী, কম কথা বলা মানুষও মেলামেশা করছেন, বেশি কথা বলছেন, সৃজনশীন কাজ করছেন এমন উদাহরণও আছে। এটা গেল একটা দিক। অন্যদিকটা হচ্ছে মারাত্মক। সেখানে মেজাজ শূন্য থেকে একশোর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। কখনও ভাল তো কখনও একদম খারাপ। রোগীর মনে হতে থাকে সে অন্য একটা মানুষ। সম্পূর্ণ অন্য চরিত্র নিয়ে বাঁচছে। সেই মতো কাজ করতে শুরু করে। আচরণে বদল আসে। হাবভাব পাল্টে যায়। এমনও দেখা গেছে কথা বলার ধরণ, মতিগতি সবই বদলে গেছে রোগীর। যেন অন্য মানুষ হয়ে উঠেছে। একেই বলে দ্বৈত সত্তা। বাইপোলার ডিসঅর্ডারের আরও একটা খারাপ দিক হল রোগী তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করে। মনের ভেতর উদ্বেগ, দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। রাগ, দুঃখ, ঘৃণা একসঙ্গে জেগে ওঠে। অনেকের ক্ষেত্রে প্রতিশোধ-স্পৃহাও প্রবল হয়। আত্মহত্যার মানসিকতা জেগে ওঠে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভোগা অনেক রোগীই মনে করেন তাঁর জীবনের সব শেষ হয়ে গেছে। তিনি মুখ থুবড়ে পড়েছেন। সবকিছু ভেঙেচুরে বেরিয়ে আসতে চান অনেকে, আবার অনেকে জীবনকেই শেষ করে দিতে চান। তবে সঠিক কাউন্সেলিং করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পড়ুন দ্য ওয়ালের সাহিত্য পত্রিকা 'সুখপাঠ'