শেষ আপডেট: 27th October 2024 16:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পশ্চিম বর্ধমান: বান্ধবীকে ভয় মুক্ত করতে পুকুরের কাজলা জলে নেমেছিল বাড়ির বড় মেয়ে কল্যাণী। তাতেই ঘটে যায় বিপত্তি। ওই পুকুরে তলিয়ে যায় কল্যাণী। এই ঘটনায় হইচই পড়ে গিয়েছিল দুর্গাপুরের আমরাই গ্রামে। গ্রামের অভিজাত পরিবার বন্দ্যোপাধ্যায়দের মেয়েকে খুঁজতে ৩০জন মৎস্যজীবীকে ওই পুকুরে নামানো হয়। জাল ফেলে গোটা পুকুর তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছিল। কিন্তু কল্যাণীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেয়ের শোকে অবসন্ন রত্নেশ্বর বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও তাঁর ছেলে কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্য়ায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তখন তাঁদের স্বপ্নাদেশ দেন দেবী।
সেখানে দেবী বলেন, পরের দিন ভোরেই কল্য়াণী বাড়িতে ফিরে আসবে। স্বপ্নাদেশ মতোই ভোরে চোখের সামনে মাথায় একটি কলস নিয়ে পুকুর থেকে উঠে এসেছিল রত্নেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে কল্যাণী। সেই থেকে তিনশ বছর ধরে আমরাই গ্রামের বন্দ্যোপাধ্য়ায় পরিবারে মেয়ে কল্য়াণী কালীরূপে পূজিতা হয়ে আসছেন।
চারশ বছর আগের কথা। কাটোয়ার বন্দিঘাঁটি থেকে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য রত্নেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় আমরাই গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পাড়ায় এসে বসবাস শুরু করেন। রত্নেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক ছেলে কৃষ্ণমোহন ও এক মেয়ে কল্যাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকমুখে প্রচলতি রয়েছে, তখন এলাকায় বেশি বসতি ছিল না। নির্জন একটি পুকুরে কল্যাণী কয়েকজন বান্ধবীর সঙ্গে স্নান করতে গিয়েছিল। পুকুরের জল মিশ কালো। পাড়ে থেকে দেখলে তল খুঁজে পাওয়া যেত না। কল্যাণীর এক বান্ধবী ওই পুকুরে নামতে তার পায়ে কিছু একটা স্পর্শ হয়। ভয়ে পেয়ে যায় ওই কিশোরী।
পুকুর থেকে উঠে এসে সে কল্যাণীকে সে কথা জানায়। বান্ধবীর ভয় কাটাতে সাহসী কল্যাণী পুকুরে নামে। এরপরেই পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বান্ধবীরা দেখে, কল্যাণী পুকুরে তলিয়ে যাচ্ছে। মেয়েকে খুঁজতে ওই পুকুরে ৩০ জন মৎস্যজীবীকে নামান রত্নেশ্বর। কিন্তু কল্যাণীকে খুঁজে পাননি। তারপরে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন তিনি। পরের দিন মেয়েকে কলস মাথায় পুকুর থেকে উঠে আসতে দেখেছিলেন রত্নেশ্বর। কল্যাণী সেই কলস মাথা থেকে নামিয়ে রাখার পরে কালীপুজোর নির্দেশ দেয়। সেই থেকে গোটা গ্রাম ভাবতে শুরু করে বন্দ্যোপাধ্য়ায় পরিবারের মেয়ে দেবত্বলাভ করেছে। তাই কল্যাণীকে কালীরূপে পুজো করতে শুরু করেন আমরাই গ্রামের মানুষ।
কল্যাণীর আনা সেই কলসকে সকলে 'ব্রহ্ম কলস' বলে থাকেন। সযত্নে সেই কলস আজও আমরাই গ্রামের দেবীমন্দির অক্ষত রয়েছে। কলসের জল বছরে একবার পরিবর্তন করা হয়। সেটি ঢাকা দেওয়া থাকে সোনা, তামা, রুপো, কাঁসা, পিতল-সহ বিভিন্ন ধাতু সহযোগে নির্মিত পদ্ম চিহ্নিত শ্রী যন্ত্র দিয়ে। কল্যাণী কালীর রীতি অনুযায়ী, কালীপুজোর রাতে পশু বলি দেওয়া হয়। তন্ত্র মতে দেবীর আরাধনা হয়। মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি জলাশয়। বহু মানুষ বহু মনবাসনা নিয়ে সেখানে গিয়েও স্নান করেন। অনেকে মনবাসনা পূরণ হওয়া এই মন্দিরকে অনেকেই জাগ্রত বলে মনে করেন। তাই দূরদূরান্ত থেকে ভক্তদের আগমন হয় এখানে।
পরিবারের বর্তমান সদস্যদের দাবি, দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষরা এই ব্রহ্মকলসের জল পান করলে সুস্থ হয়ে যায়। কালীপুজোর পরদিন কয়েক হাজার মানুষকে মায়ের ভোগ-প্রসাদ খাওয়ানো হয়। পুজোর যা কিছু খরচা তা মা কল্যাণী জোগাড় করে দেন।