শেষ আপডেট: 22nd October 2024 20:54
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: আউশগ্রামের জনশূন্য এই গ্রাম জঙ্গলের ঘেরা। গ্রামের আদি বাসিন্দারা এখানেই ফিরে আসেন এই কালীপুজোর সময়ে। বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে শোলকো কালী পুজোয় মাতেন তাঁরা। টিনের ছাউনি দেওয়া এই গ্রামের রয়েছে কালী বেদি। সেখানে নিঃশব্দে পূজিতা হন দেবী। আশেপাশের গ্রামের মানুষও সেখানে অংশ নেন।
অমরপুর অঞ্চল শালবনে ঘেরা। গ্রামের মানুষ কথায়, ওই বেদির তলায় রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। সেই আসনে দেবী কালীকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শালকো গ্রামের বাসিন্দারা। এখানে কালীপুজোর রাতে শ্মশানকালীর পুজো হয়।
একসময় এই জঙ্গলের মধ্যে ‘শালকো’ নামের একটি গ্রাম ছিল। সেখানে দুশোর বেশি পরিবারের বসবাস ছিল। জনশ্রুতি রয়েছে বহু বছর আগে গ্রামে কলেরার প্রকোপ দেখা দেয়। তখন মহামারীতে অনেকেই মারা যান। রাতারাতি বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। তাঁরা শালকো থেকে উঠে গিয়ে আদুরিয়া, জালিকাঁদর, গোয়ালআড়া গ্রামে আশ্রয় নেন। শালকো গ্রামের পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি জঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে যায়। কথিত আছে মানুষ গ্রাম ছাড়ার সময়ে এখানকার কালীপ্রতিমাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু চেষ্টা করেও সেখান থেকে নিয়ে যেতে পারেননি। তাই তাঁদের বিশ্বাস, দেবী নিজের আসন ছেড়ে অন্যত্র যেতে রাজি হননি। তাই শালবনে ঘেরা এই গ্রামে কালীপুজোর সময়ে তাঁরা ফিরে আসেন দেবীর পুজো করতে।
এই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তুহিন কোনারের পূর্বপুরুষ। তাঁরা বছরের প্রত্যেক অমাবস্যায় দেবীর পুজোয় আসেন। মূলত কার্তিকী অমাবস্যায় শ্মশানকালীর পুজোয় মাতেন তাঁরা। তাছাড়া জঙ্গলে ঘেরা শালকো কালীর স্থানের আশপাশে কেউ ঘেঁষেন না। একবার চাঁদা তুলে একটি মন্দির গড়ার চেষ্টা করেছিল তাঁরা। কিন্তু পরিকল্পনা নেওয়ার পরেও তাঁরা সফল হননি। একাধিক বাধা-বিপত্তির মুখে পড়তে হয়েছে গ্রামবাসীদের। তাই বিশ্বাস দেবী বেদীতেই থাকতে চান। তাই সেই বেদী টিনের ছাউনি নিয়ে ঘিরে দিয়েছিলেন তাঁরা। পুজোর সময়ে ছাউনির পিছনে শালপাতা নিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পুজোর রীতি অনুযায়ী, কোনও বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানো হয় না। বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে রেখে দেবীর আরাধনা করা হয়।