শেষ আপডেট: 6th July 2024 15:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: ইতিহাসে পিএইচডি করতে চান জেলে বন্দি মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। বারবার আবেদনের পরে ইন্টারভিউয়ের জন্য কড়া নিরাপত্তায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফল বেরোতেই ইতিহাস। দেখা গেল প্রথম স্থান অধিকার করেছেন অর্ণব।
বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে পথ হিসেবে বন্দুক আর গুলির লড়াইকেই বেছে নিয়েছিলেন। তবে শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পরে নতুন করে পড়াশোনাটাকেই আঁকড়ে ধরতে চান একসময়ের মেধাবী এই ছাত্র। জেলে বসেই পিএইচডি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আদালত সম্মতি দিলেও জেল কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে বেগ পেতে হয়। পরে অবশ্য বন্দি অর্ণবের পাশে দাঁড়ায় এপিডিআর সংগঠন। তারা হুগলি জেল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায়। দাবি না মানলে ভেতরে-বাইরে একযোগে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেয়। শেষে জেল প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। অর্ণবের পিএইডির ইন্টারভিউর ব্যবস্থা হয়। গত ২৬ জুন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ণবের ইন্টারভিউ দেওয়ার ব্যবস্থা হয় ।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সইদ তনভির নাসরিন জানান, ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি’র জন্য গৃহীত ইন্টারভিউয়ের রেজাল্ট শুক্রবার প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি’র আসন সংখ্যা ৯টি হলেও ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন ২৫০ জন। তাঁদের সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়ে সফলদের তালিকায় অর্ণব দামের নাম রয়েছে এক নম্বরে। তিনি বলেন, “শুধু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই বিষয়টি নজিরবিহীন। ওঁর ইচ্ছাপূরণে সরকার যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে সেটাও সমানভাবে উল্লেখযোগ্য।"
পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম।একদা রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের ঘুম কেড়ে নেওয়া এই মাওবাদী নেতা গত ২৬ জুন ইতিহাস নিয়ে পিএইচডির জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউ দেন।তাঁর ইন্টারভিউ নেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইতিহাস বিভাগের দিকপাল অধ্যাপকরা। কড়া পুলিশি পাহারায় অর্ণবের ইন্টারভিউ দিতে আসা নিয়ে সেদিন সরগরম ছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অর্ণব দাম এখন হুগলির চুঁচুড়া জেলা সংশোধনাগারে বন্দি। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজা ঘোষণা হয়। তারপর থেকে তাঁর ঠিকানা ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেল। ১৭ মার্চ থেকে অর্ণবের নতুন ঠিকানা হয় হুগলির চুঁচুড়ার সংশোধনাগার। সেখানে লাইব্রেরি আছে। সেই লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে অর্ণব পড়াশোনা চালান। এর আগে ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেয়েছেন অর্ণব। পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আদালতে তিনি আর্জি জানান। বিচারক তাঁর আদেশে সেই আবেদনের বিষয়টি নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা বিবেচনা করতে বলেন। তারপরেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির ইন্টারভিউয়ে নজরকাড়া ফল করলেন তিনি।