শেষ আপডেট: 13th March 2025 12:28
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: নিজের বলতে বছর সত্তরের দাদু এবং বছর পয়ষট্টির দিদিমা। দিন দশেক ধরে তাঁরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এই পরিস্থিতিতে সাড়ে চার বছরের ভাইয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছে ন’বছরের দিদি(Bardhaman Siblings)। গুসকরা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তুড়িপাড়ার এই দুই অসহায় শিশু রূপালী তুরি ও শঙ্কু তুরির ঠাঁই হয়েছে স্থানীয় ক্লাবে। রাতে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাওয়ায় তাদের। তারপর সেখানেই তারা ঘুমিয়ে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই শিশুর বাবা মারা গেছে। মায়েরও কোনও খোঁজ নেই। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পরেই বাচ্চাদের ছেড়ে মা নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তখন থেকেই মায়ের বাবা ছবিয়া তুড়ি এবং মা মৌসুমীর কাছেই থাকে তারা। কিন্তু এখন দাদু-দিদিমাও অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন তাঁদের দায়িত্ব কে নেবে, সেই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সোমা তিওয়ারি, রত্না গুহরা জানান, এতদিন স্থানীয় অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র থেকেই ওদের খাবার দেওয়া হত। কিন্তু এখন খাবার নিয়ে আসার মতো লোকও নেই তাঁদের। অঙ্গনওয়ারির সহায়িকা নিজে গিয়ে তাঁদের খাবার পৌঁছে দিতেন। কিন্তু কিছুদিন আগে ওই বাচ্চা দুটি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সম্প্রতি সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছে। তখন থেকে খাবার দেওয়া বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, বাচ্চা দুটি অপুষ্টিতেও ভুগছে। অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র বা স্কুলে যায় না। পাড়ার লক্ষ্মী তুড়ি, উর্মিলা তুড়িরা তাঁদের দেখভাল করেন। খাইয়ে দেন, ঘুম পাড়িয়ে দেন। কিন্তু তাঁরাও অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। সকাল থেকে কাজের জন্য বেরিয়ে যেতে হয় তাঁদেরও। তখন বাচ্চা দুটি পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়ে। পাড়ার প্রত্যেকেই দুঃস্থ। দিনমজুরি বা পরিচারিকার কাজ করেই তারা সংসার চালান। ফলে তাঁদের পক্ষেও বাড়তি দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়। এই অবস্থায় সরকার শিশু দুটির দায়িত্ব নিক, চাইছেন তাঁরা।
খবর পেয়ে তুড়িপাড়ায় যান গুসকরার পুরপ্রধান কুশল মুখোপাধ্যায় এবং ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার যমুনা শিকারী। কুশলবাবু বলেন, “আপাতত ওই বাচ্চা দুটিকে দেখাশোনার জন্য একজনকে দায়িত্ব নিতে বলেছি। তাদের খাবার, পোশাক, ওষুধ সব কিছুই আমরা দেব। পাশাপাশি শিশু দুটির ভরণপোষণের দায়িত্ব আমি নিজে নিয়েছি।” তিনি জানান, এখন শিশু দুটির অভিভাবক তাঁদের দাদু, দিদিমা। তাই তাঁদের অনুমতি ছাড়া শিশু দুটিকে হোমে পাঠানো সম্ভব নয়। তাঁদের অনুমতি পেলে এব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হবে।