দ্য ওয়াল ব্যুরো: অভিন্ন দেওয়ানি বিধির সমর্থনে সওয়াল দিল্লি হাইকোর্টের। মিনা সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইন প্রযোজ্য কিনা, তা নির্ধারণের আর্জির শুনানি করে বিচারপতি প্রতিভা সিংয়ের এক বিচারপতির বেঞ্চ ইউনিফর্ম সিভিল কোড সমর্থন করে কেন্দ্রীয় আইন ও ন্যয়মন্ত্রককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেছে।
জনৈক শতপ্রকাশ মিনার ২০১২র ২৪ জুন বিয়ে হয়েছিল। তিনি ২০১৫-র ২ ডিসেম্বর পারিবারিক আদালতে ডিভোর্সের আবেদন করেন। তবে তাঁর স্ত্রী রিভিউ পিটিশনটি খারিজের আবেদন করেন এই কারণ দেখিয়ে যে, তাঁরা দুজনেই মিনা সম্প্রদায়ের, যা রাজস্থানের একটি নোটিফায়েড তফসিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃত। ২০২০র ২৮ নভেম্বর ফ্যামিলি কোর্ট স্ত্রীর পক্ষে রায় ঘোষণা করে জানায়, মিনা সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে হিন্দু বিবাহ আইন প্রযোজ্য নয়। এই রায়কেই পিটিশনার চ্যালেঞ্জ করেছেন।
পরিবার আদালতের রায় খারিজ করে বিচারপতি প্রতিভা সিং জানান, হিন্দু বিবাহ আইন এই বিয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কেননা বিয়েটা হয়েছে হিন্দু আচারবিধি, রীতি মেনে। তিনি বলেন, আগের রায়টি গ্রাহ্য নয়, খারিজ করা হচ্ছে। নিম্ন আদালতকে ১৯৫৫র হিন্দু বিবাহ আইনের ১৩-১ (১এ) ধারায় মামলার বিচার করে ৬ মাসে সিদ্ধান্ত জানাতে নির্দেশ দেওয়া হল।
৭ জুলাইয়ের রায়ে বিচারপতি বর্তমান মামলাটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রয়োজনীয়তা, প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরছে বলে অভিমত জানান। সুপ্রিম কোর্ট বহুদিন ধরেই এই বিধির কথা বলে আসছে। সংবিধানের ডিরেকটিভ প্রিন্সিপলস অব স্টেট পলিসির একটা অংশ, ৪৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র গোটা ভারত ভূখন্ডে নাগরিকদের জন্য একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার লক্ষ্যে প্রয়াস চালাবে।
তবে দিল্লি হাইকোর্ট বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, সুপ্রিম কোর্টের ১৯৮৫ সালের রায় থাকা সত্ত্বেও ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করায় কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্র। ভারতীয় সমাজ ক্রমশঃ সম চরিত্রের হয়ে উঠছে, ধর্ম, সম্প্রদায়, জাতপাতের চিরাচরিত দেওয়াল ভেঙে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনশীল মাপকাঠির পরিপ্রেক্ষিতে একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রয়োজন। আদালত বারবার নানা পার্সনাল ল-এর ফলস্বরূপ সংঘাত, দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়। বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায়, জাত, বর্ণের ছেলেমেয়েদেরও বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িয়ে এধরনের দ্বন্দ্বের মুখে পড়তে হয়। বিচারপতি সিং বলেন, ভারতের যুবসমাজ বিভিন্ন সম্প্রদায়, জাতি, গোষ্ঠী বা ধর্মের। তাঁরা ভিন ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে করলে বা ডিভোর্সের ক্ষেত্রে যেন বিভিন্ন পার্সনাল ল-য়ের বিরোধের জাঁতাকলে না পড়েন।
দেশে ধর্ম-নিরপেক্ষ উত্তরাধিকার আইনের ব্যাপারে গত বছরের মার্চে কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এধরনের ৫টি পিটিশন সুপ্রিম কোর্টে গ্রহণ করাতে সফল হয়েছিলেন বিজেপি সদস্য তথা আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায়। দেশে ইউসিসি চালুর প্রথম ধাপ হতে পারে এটি।
ইউসিসি বিয়ে, ডিভোর্স, দত্তক নেওয়া, উত্তরাধিকারের মতো বিষয়ে ধর্মীয় পরিচিতি নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বর্তমানে একেক ধর্মের একেকরকম আইনে এই বিষয়গুলি পরিচালিত হয়।