শেষ আপডেট: 4th January 2025 15:48
নামেই সরকারি মাদ্রাসা। কিন্তু কাজে যে কোনও বেসরকারি স্কুলকে বলে বলে দশ গোল দেবে। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের নিশ্চিন্তপুর হাই মাদ্রাসায় পা রাখলে এমনটাই মনে হবে আপনারও।
মাদ্রাসার গেটে পা রাখলেই চোখে পড়বে বিশাল বাগান, সেখানে পুকুরে চড়ে বেড়ায় হাঁসের দল। পড়ুয়াদের খেলার জন্য রয়েছে পার্ক। সেখানে দোলনা, স্লিপ সবকিছু রয়েছে। সামাজিকভাবে পড়ুয়াদের সচেতন করে তুলতে দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা রয়েছে বার্তা। এমনকি কম্পিউটার রুম, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি থেকে শুরু করে জিমও রয়েছে সেখানে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পানীয় জল ও পরিষ্কার শৌচালয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে এই মাদ্রাসায়। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এই মাদ্রাসা আধুনিক শিক্ষার এক জলজ্যান্ত উদাহরণ। মাদ্রাসাকে এই পর্যায়ে পৌঁছে দিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ উজির আলির।
মাদ্রাসার শিক্ষক শেখ সুরজ আলি বলেন, 'প্রধান শিক্ষক সকাল ৯টা থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত প্রতিদিন এখানে থাকেন। সবসময় চিন্তা করেন কীভাবে স্কুলকে আরও ভাল জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। আমরা ওঁর পরামর্শ মেনে সবসময় সহযোগিতার চেষ্টা করি।'
শিক্ষিকা সঞ্চিতা রায় বলেন, 'প্রধান শিক্ষকের পরিকল্পনা মতোই আমরা সবাই একসঙ্গে চেষ্টা করেছি। পুরোটা এখনও সম্ভব হয়নি। তবে আমরা অনেকটাই পেরেছি। আগামীদিনে আরও ভাল হবে।'
ইতিমধ্যেই 'নির্মল বিদ্যালয়' হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই মাদ্রাসা। ২০১৪ সালে মাদ্রাসা বোর্ড মাদ্রাসাটিকে ‘মডেল মাদ্রাসা’ ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে এটি পূর্ব বর্ধমান জেলার 'সেরা মাদ্রাসা' হয় এটি। ২০১৯ সালে 'শিশুমিত্র' পুরস্কারও আসে মাদ্রাসার ঝুলিতে।
কিন্তু যিনি একটি সাধারণ মাদ্রাসাকে উচ্চস্তরে পৌঁছে দিয়েছেন সেই প্রধান শিক্ষক উজির আলির দাবি, 'শিক্ষকতা শুধু পেশা নয়, একটা গুরু দায়িত্ব। সহ-শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, পড়ুয়াদের আগ্রহ, অভিভাবকদের ও পরিচালন কমিটির সহযোগিতা ছাড়া এসব সম্ভব হত না।'
প্রধান শিক্ষকের আদি বাড়ি সিউড়ির ইটাগড়িয়া গ্রামে। বর্তমানে তিনি শহর বর্ধমানের বহির্সর্বমঙ্গলা পাড়ায় থাকেন। ইটাগড়িয়া গ্রামের স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করার পর বর্ধমান টাউন স্কুল ও পরে সিএমএস স্কুলে তিনি পড়াশুনা করেন। স্নাতকস্তরের পড়াশুনা তিনি করেছেন বর্ধমান রাজ কলেজে।
কল্যাণী ইউনিভার্সিটি থেকে অঙ্কে মাস্টার ডিগ্রি শেষ করার পর ইটাগড়িয়া হাইস্কুলেই উজির আলির প্রথম শিক্ষকতা জীবন শুরু। পরে ২০০৭ সালে তিনি খণ্ডঘোষের নিশ্চিন্তপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জানা গেছে, ২০২২ সালে রাজ্য সরকারের থেকে 'শিক্ষক রত্ন' সম্মান পান প্রধান শিক্ষক।