শেষ আপডেট: 14th December 2024 18:14
দ্য় ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে স্নাতক হয়েই চাকরিতে যোগ দিতে হয়েছিল। একবার ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসে তিন নম্বরের জন্য প্রাথমিক স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তারপর সরাসরি ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার জন্য মনস্থির করেন। দু-দুবার অল্প নম্বরের জন্য আটকে গিয়েছিলেন। হাল ছাড়েননি পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম থানার পাণ্ডুক গ্রামের বিল্টু মাজি। তিনবারের চেষ্টার পর সর্বভারতীয় ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল সার্ভিসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন বিল্টু। শুধু তাই নয়, মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন তিনি। প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে বিল্টু মাঝির এই সাফল্যে গর্বিত এলাকাবাসী। শুভেচ্ছার ঝড় বইছে সামাজিক মাধ্যমেও।
আউশগ্রামের পাণ্ডুক গ্রামের বাসিন্দা প্রান্তিক কৃষক জয়দেব মাজি এবং সুমিত্রাদেবীর এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছোট বিল্টু। গ্রামের পাণ্ডুক প্রাথমিক বিদ্যালয়েই তাঁর পড়াশোনা। এরপর পাণ্ডুকের পিপিডি হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা করে ২০১৫ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে বিশ্বভারতী থেকেই স্ট্যাটিসটিক্সে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করেন।
বিল্টু বলেন,"এমএসসি করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পারিবারিক পরিস্থিতির কারণে চাকরি খুঁজতে হয়। কারণ আমাদের মাত্র বিঘা দুয়েক জমির উপর ভরসা। বাবাকে ঋণ নিয়ে দিদির বিয়ে দিতে হয়েছিল। আর ওই ঋণের সুদ মেটানোর পর আর সংসার চালানোর মতো সঙ্গতি ছিল না। তাই ২০২০ সালে বিএসসি শেষ করার পরেই ওই বছরের শেষের দিকে গ্রামীণ পোস্ট অফিসে শাখা পোস্ট মাস্টার হিসাবে কাজে যোগ দিই।" বিল্টু এখন বীরভূম জেলার রূপপুর গ্রামের পোস্ট অফিসে কর্মরত বলে জানা গিয়েছে।
চাকরি করার পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও নিতে থাকেন বিল্টু। তিনি জানান, ২০২১ সালে প্রথম ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসার পর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৩ নম্বরের জন্য আটকে যান। কিন্তু তারপর আর ডব্লিউ বি সি এস পরীক্ষায় বসার চেষ্টা করেননি। সরাসরি ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি শুরু করেন। পরের বছর ২০২২ সালে প্রথম আইএসএস পরীক্ষায় বসেন। কিন্তু ওই বছর প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মৌখিক পরীক্ষায় আটকে যান। স্কোরকার্ড অনুযায়ী ১৬ নম্বর কম হয়। ২০২৩ সালে আবার একই পরীক্ষায় বসেন। ওইবছরেও জেনারেল ক্যাটাগরিতে ২ নম্বর কম হয় তাঁর।
বিল্টুর কথায়, "দ্বিতীয়বারও ২ নম্বরের জন্য আটকে যাই লিখিত পরীক্ষাতে। এরপর আরও জেদ চেপে বসে। এমনিতেই আমার মা প্রেরণা জুগিয়ে গিয়েছেন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত হাল ছেড়ো না। স্বামীজীর বাণী আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে। অবশেষে এল সাফল্য।"