শেষ আপডেট: 25th October 2024 15:17
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: কার্তিকের অমাবস্যার রাতে আলোক রোশনাইয়ে ভাসে গোটা বর্ধমান। আর ওই দিনই নিভৃতে পূজিতা হন বর্ধমানের তেজগঞ্জের বিদ্যাসুন্দর কালী। জন কোলাহল,আলোর রোশনাই, ঢাকের বাদ্যি, সবকিছু থেকে অনেক দূরে কার্যত অন্তরালেই থাকেন ভরতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দর কালী।
তেজগঞ্জের নির্জন নিভৃতে অবস্থান করলেও তাঁর প্রতি ভক্তিভাবে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। নিত্যদিন পুজোপাঠ ও সন্ধ্যা আরতি হয়। নিজ মাহাত্ম্যেই দেবী তাঁর ভক্তদের শ্রদ্ধার আসনে জায়গা করে নিয়েছেন। বিদ্যাসুন্দর কালীর পুজো নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। রায়গুণাকার ভরতচন্দ্রের কাব্যগ্রন্থেও উল্লেখিত রয়েছে বিদ্যাসুন্দর কালীর কথা ।
কথিত আছে,এক সময়ে জঙ্গলে ঘেরা ছিল দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ। সেখানেই ছিল প্রাচীন কালী মন্দির। বর্ধমানের রাজারা ওই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন। এও শোনা যায় ওই সময়ে এই মন্দিরে দেবীর সামনে নরবলি হত। মন্দিরের আশেপাশে সুড়ঙ্গও ছিল। তবে সেই সুড়ঙ্গ কোথায় ছিল তা অবশ্য আজ আর কেউ বলতে পারেন না। ওই সুড়ঙ্গ দিয়েই রাজকন্যা বিদ্যার সঙ্গে গোপনে দেখা করতেন সুন্দর। সুন্দর ছিলেন দক্ষিণ মশান কালীর গরিব পুজারীর সন্তান। রাজবাড়ি থেকে মন্দিরে পুজোর ফুল দিতে আসতেন মালিনীর মাসি। একদিন সুন্দর তার কাছে সুন্দর একটি মালা দেখতে পান । তিনি মালিনী মাসির কাছে জানতে পারেন মালাটি নাকি গেঁথেছে রাজকন্যা বিদ্যা। সুন্দর এর পরেই রাজকন্যার সঙ্গে দেখা করার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠলে বিদ্যা সেদিন ভয়ে পালিয়ে যায়।
কিন্তু পালিয়ে গেলে কি হবে।সুন্দরের মন উদগ্রীব হয়ে ওঠে বিদ্যার জন্যে। ধরা পড়লে একেবারে নিশ্চিৎ মৃত্যু জেনেও সুন্দর রাজবাড়ি পর্যন্ত সুড়ঙ্গ কেটে ফেলে। সুড়ঙ্গ পথ ধরেই সুন্দর রাজকন্যা বিদ্যার কাছে পৌঁছে যায় । সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গভীর প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিদ্যা আর সুন্দরের মধ্যে । বিদ্যা আর সুন্দরের এই সম্পর্কের কথা রাজার কানে পৌঁছে দেন তার চরেরা। একথা জানার পরেই রাজা তেজগঞ্জের মন্দিরেই দেবী মায়ের সামনে নিজের মেয়ে আর তার প্রেমিককে বলির নির্দেশ দেন।
হাঁড়িকাঠে তাদের দু’জনকে বলি দেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে দেবীকে প্রণামের অনুরোধ করে সুন্দর। তখনই মূর্ছিত হন কাপালিক। সেই মুহুর্তেই নিরুদ্দেশ হয় বিদ্যা আর সুন্দর। তারপর থেকে তাঁদের আর কোন খোঁজ মেলেনি। এরপর থেকে রাজার আদেশে মন্দিরে নরবলি বন্ধ হয়ে যায়। ভরতচন্দ্রের সেই বিদ্যাসুন্দর কালী আজও রয়েছেন বর্ধমানের তেজগঞ্জে। এখানে এখনও রয়েছে সেই মূর্তি। আর রয়েছে ভৈরব আর পঞ্চানন্দ এই দুই মন্দির। কথিত আছে রাজ নির্দেশে বাঁকুড়া থেকে এসে এই মন্দিরে পুজার ভার পেয়েছিলেন বর্তমান সেবায়েত বংশের পূর্বপুরুষ ।
সেবাইত আভা রাণী বটব্যাল জানান, একসময় এখানকার ভোগের প্রসাদ খেয়ে অনেকেই বেঁচে থাকতেন। সেই জাঁকজমক আজ আর নেই। তবুও শ্যামাপুজোর দিন এই মন্দিরে নিষ্ঠা সহকারে পুজো হয়। তারপর আবার নির্জনেই থেকে যান বিদ্যা সুন্দর কালী।