শেষ আপডেট: 29th August 2023 18:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে (Bangladesh) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (National Parliament Elections) আর মাস চারেক বাকি। তার আগে ক্রমশ প্রচারের আলোয় আসছেন সে দেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুস। বিগত কয়েক বছর ধরেই সে দেশের রাজনীতির অঙ্গনে চর্চা আছে বাংলাদেশে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ক্ষমতায় আনতে তৎপর আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার একাংশ। সেই ব্যক্তিটি মহম্মদ ইউনুস বলে হালে একাধিক পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের খবরে স্পষ্ট করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদকে নিয়ে পশ্চিমি দুনিয়ার দরদ ও উৎকণ্ঠাও নানাভাবে সামনে এসেছে। তার সর্বশেষ নজির একাধিক নোবেলজয়ী সব ১৬০ বিশ্ব ব্যক্তিত্বর সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠি।
নোবেলজয়ী ইউনুস বাংলাদেশের প্রথমসারির উদ্যোক্তা। তিনি সে দেশের বৃহত্তম মোবাইল কোম্পানি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক-সহ বাংলাদেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীরা সে দেশের শ্রম আদালতে অভিযোগ করেন, ইউনুস শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করে তাঁদের পথে বসিয়ে দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ হওয়া তদন্ত সেই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় পুরোদস্তুর শুনানি শুরু হয়েছে। হালে আদালত নোবেন জয়ীর বিরুদ্ধে বিধি মেনে চার্জ গঠন করেছে।
আর এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব নেতারা শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়ে তাঁকে লেখা খোলা চিঠিতে বলেছেন, ইউনুসকে মামলা থেকে রেহাই দেওয়া হোক। তাঁকে আইনি পথেই হেনস্থা করা হচ্ছে বলে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষরদানকারীদের মধ্যে আছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, বিদেশমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন প্রমুখ।
মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই চিঠির প্রসঙ্গে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরদানকারীরা চাইলে এসে মামলার কাগজপত্র পরীক্ষা করতে পারেন। এই সব মামলায় সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী বলে আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারি না। ন্যায়-অন্যায় আদালত বিচার করবে। সরকার বিচার বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। পশ্চিমি নেতাদের অনুরোধকে অনধিকার আবদার বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে খুশি হওয়ার কথা বিরোধী দল বিএনপি’র। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের খবর, ইউনুসকে নিয়ে চলতি পরিস্থিতিতে শাসক দল আওয়ামী লিগের থেকেও বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে সে দেশের প্রধান বিরোধী দল। কারণ, ইউনুসকে নিয়ে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি বিশ্ব মাতামাতি শুরু করায় বিরোধী পরিসর থেকে ক্রমে সরে যাচ্ছে খালেদা জিয়ার পার্টি। ওই দল বিগত এক বছর যাবৎ রাজপথে সরকার বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি, হাসিনা সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। ভোট করতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণের প্রশ্নে কঠোর মার্কিন ভিসা নীতি আরোপের পর রাজপথে নেমে উল্লাশ করতেও দেখা যায় বিএনপি-র নেতা-কর্মীদের।
কিন্তু ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে দুটি বিষয়। বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সাড়া দেয়নি পশ্চিমি বিশ্ব। দুই, আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া আওয়ামী লিগের বিকল্প হিসাবে বিএনপি’কে গ্রহণযোগ্য মনে করছে, এমন কোনও আভাস বা সূত্র নেই। প্রধান এই বিরোধী দলের চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁকে জেলখানার পরিবর্তে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছে হাসিনা সরকার। ওই দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড তথা খালেদা পুত্র তারেক রহমান দলের কার্যনির্বাহী সভাপতি। তিনিও দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে এখন লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। তাছাড়া নির্বাচনে কারচুপি, সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন, মানবাধিকার হরণের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে দলটির বিরুদ্ধে। ফলে বিএনপি’র উপর বিদেশিদের নির্ভর করছে, এটা স্পষ্ট হতেই অস্বস্তি বাড়ছে ওই দলের।
বাংলাদেশের রাজনীতি একদা তুমুল আলোচিত মাইনাস-টু ফরমুলার বিষয়টি ইউনুস কেন্দ্রিক তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে ফের আলোচনায় এসেছে। দেড়-দু’দশক আগে মার্কিন হস্তক্ষেপে সে দেশে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক নির্বাসনে পাঠিয়ে ইউনুসকে প্রধানমন্ত্রী করার চেষ্টা হয়েছিল। সেই চেষ্টা তখন বিফল হলেও ফের একই তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই মত। সম্প্রতি পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমেও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত লেখালেখিতে বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার পরিবর্তে ইউনুসকে নিয়ে আলোচনা বেশি হচ্ছে, যা বিরোধী দলের অস্বস্তি অনেক বাড়িয়ে তুলেছে।
শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে নাম না করে ইউনুসকেও এক হাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোম্পানি আইনে আছে লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। এখন সেটা যদি কেউ না দেয় তাহলে মামলা তো হবেই।’ তিনি আরও বলেন, কেউ নির্লজ্জ না হলে বিদেশিদের দিয়ে বিবৃতি আদায় করে না। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সাবেক এমডি ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে হাসিনা বলেন, ‘বেতনভুক একজন ব্যাংকের এমডি বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কীভাবে ইনভেস্টমেন্ট করে আর বাণিজ্য করে?’ তাঁর কথায়, ‘সবাই দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলছেন। আর ধরা পড়া দুর্নীতিবাজ পছন্দের লোক হলেই তার নাকি কোনও দোষ নাই।’
ঢাকায় আতঙ্কের পরিবেশ, বাংলাদেশে ঘরে ঘরে ডেঙ্গি, প্রাণ কেড়েছে ৫৩৭ জনের