শেষ আপডেট: 31st July 2020 06:41
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সেদিন খানিক হইহুল্লোড় করে ফেসবুকে হাসিমুখে ছবি দিয়েছিলেন মুরিয়েল মরিসন। খানিকটা বিয়ার খেয়েছিলেন তিনি অনেক দিন পরে। তার পরে প্রতিদিনের মতোই বদল করেছিলেন চার মাসের ছোট্ট শিশুকন্যার ডায়াপার। তাকে রাতে খাওয়ানোর জন্য নিজের বুকের দুধও পাম্প করেছিলেন। সব কাজ সেরে অন্য দিন যেমন ঘুমোন তেমনই ঘুমিয়েছিলেন মেয়ের পাশে। সকালে উঠে মা দেখেছিলেন, পাশে ঘুমিয়ে থাকা মেয়ের ঠোঁট নীল হয়ে গেছে শরীরে সাড়া নেই। মারা গেছে সে। ২০১৩ সালে আমেরিকার ম্যারিল্যান্ডের এই ঘটনায় সন্তানহারা মা মুরিয়েল মরিসনকে ২০ বছরের সাজা দিয়েছিল আদালত। অভিযোগ উঠেছিল তাঁর গাফিলতির কারণেই দমবন্ধ হয়ে মারা গেছে শিশুটি, তিনি মদ্যপ অবস্থায় থাকার কারণেই এমনটা ঘটেছে। কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি। আদালতের বিচারকদেরই একাংশ দাবি করেছিলেন, মায়ের ওপর এমন দোষ দেওয়া অমূলক। আরও তদন্ত প্রয়োজন। অবশেষে চূড়ান্ত রায় দিল আদালত। ঘটনার সাত বছর পরে জানাল, বিয়ার খেয়ে শিশুর পাশে ঘুমোনো এমন কোনও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নয়, যাতে শিশুর মৃত্যু হতে পারে বা বড় কোনও শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। এই মর্মেই মত দিয়েছেন বিচারপতি মিশেল ডি হটেন, ম্যারি এলেন বারবেরা, শার্লি এম ওয়াটস এবং ব্রিঞ্জা এম বুথ। যদিও এর পাশাপাশিই ওই রায় আরও জানিয়েছে, দোলনায় অথবা খাটের পাশে ছোট বেবিকটে শিশুকে ঘুম পাড়ানোই সবচেয়ে নিরাপদ। তথ্য বলছে, প্রতি বছর আমেরিকায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিশু ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যায় শ্বাসবন্ধ হয়ে। এর নানা কারণ আছে। ফলে ঘুমন্ত অবস্থায় মায়ের পাশে শিশুর মৃত্যু হওয়া মানেই যে তা মায়েরই গাফিলতি, অথবা মায়েরই শরীরে চাপা পড়ে মৃত্যু, তা নাও হতে পারে। তিন বছর ধরে মামলা চলেছিল ম্যারিল্যান্ডের এই ঘটনায়। জানা গেছিল, নিজের বাড়িতেই ছিলেন তিনি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন অনলাইনে। যদিও এ ঘটনা লকডাউনের অনেক বছর আগের, তবু নিজের বাড়ির মধ্যে থেকেই সকলে মিলে হুল্লোড় করা তখনও চলত। সে সময়েই সন্ধ্যাবেলায় ১২ আউন্স বিয়ার এবং ৪০ আউন্স অন্য মদ খেয়েছিলেন মরিসন। মরিসনের আর এক মেয়ে, যার তখন সাত বছর বয়স ছিল, সে জানিয়েছিল, মরিসন গভীর ঘুমে ছিল বোনের পাশে। আদালতে প্রশ্ন উঠেছিল, মদ্যপ অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে চার মাসের মেয়ের পাশে ঘুমিয়ে পড়ার মতো বিপজ্জনক কাজ তিনি কী কর করলেন। মরিসন কোর্টে জানিয়েছিলেন, ঘুমিয়ে পড়লেও তার আগে তিনি বাচ্চার ডায়াপার বদলানো ও বাচ্চার জন্য বুকের দুধ পাম্প করে রাখার মতো কাজগুলি সঠিক ভাবেই করেছিলেন। তাঁর মোট ৫টি সন্তান, সকলকেই পাশে নিয়ে শুয়েছেন তিনি। মরিসনের মা-ও মরিসনকে পাশে নিয়েই শুতেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। ফলে আচমকা এতটা গাফিলতি তিনি নিজের সন্তানের প্রতি করে ফেলবেন, এমনটা সম্ভব নয়। অবশেষে সাজামুক্ত হয়েছেন মরিসন। মরিসনের আইনজীবি আলি লিচা সওয়াল জানিয়েছেন, "একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল ঠিকই। কিন্তু সেটার ওপর ভিত্তি করে মাকে শাস্তি দেওয়া যায় কি? তিনি আরও ভাল করে নিজের সন্তানের যত্ন নিতে পারেননি-- এটা কি শাস্তির কারণ হতে পারে? ইচ্ছাকৃত কোনও অপরাধ না করা সত্ত্বেও নিজের সন্তানের খুনি হিসেবে নিজেকে দোষ দিয়ে যাবেন মা!" মরিসনের বয়স এখন ৪৮ বছর। ৪১ বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে ঘটে গিয়েছিল এই অপূরণীয় ক্ষতি। সেই থেকে জেলেই বন্দি তিনি। এখনও বের হতে পারেননি সেদিনের ট্রমা থেকে। অবশেষে সাত বছর পরে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন তিনি।