শেষ আপডেট: 25th August 2023 07:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নীল আর্মস্ট্রংয়ের পরে এই মহাকাশচারী বিস্ময়-কন্যাই (Christina Koch) কি সব রেকর্ড ভাঙবেন?
৫০ বছর পরে চাঁদে (Moon) মানুষ নিয়ে যাচ্ছে নাসা (NASA)। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এই চন্দ্রাভিযানের নাম আর্টেমিস। এই মিশনের জন্য বিশাল উদ্যোগ-আয়োজন চলছে। এই মিশনের পাঁচটি ভাগ রয়েছে, যার মধ্যে মানুষ নিয়ে চাঁদে অবতরণ করার পরিকল্পনাও আছে। নাসা জানিয়েছে, আর্টেমিস-২ মিশনে (Artemis-II Mission) ১০ দিনের জন্য চাঁদে পাড়ি দেবেন মহাকাশচারীরা। চার থেকে পাঁচ জন নভশ্চরকে নিয়ে যাওয়া হবে চাঁদে। তাঁদের মধ্যে একজন অ্যাস্ট্রো-ক্রিস্টিনা ওরফে ক্রিস্টিনা কচ (Christina Koch)।
চাঁদে যখন তখন পাড়ি দেওয়ার জন্য স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) রকেট বানিয়েছে নাসা। এই প্রোগ্রামের ম্যানেজার জন হানিকাট বলেছেন, আর্টেমিসের সবকটি মিশনই খুব জটিল হবে। চাঁদে মানুষ নিয়ে যাওয়ার বড় পরিকল্পনা আছে। ৫৫ বছর আগে নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স আর এডুইন (বাজ) অলড্রিনের মতো খুব অল্প সময়ের জন্য চাঁদের বুকে পা পড়বে না মানুষের। হয়ত টানা এক সপ্তাহের জন্য চাঁদের বুকে গবেষণা চালাবেন নভশ্চররা। সেই দলে থাকবেন মহিলা মহাকাশচারীও। তার জন্য ক্রিস্টিনাই (Christina Koch) আদর্শ বলে মনে করছেন নাসার মহাকাশবিজ্ঞানীরা।
অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পদার্থবিদ, ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস্টিনা এক বিস্ময়-কন্যা (Christina Koch)
মিশিগানে জন্ম ক্রিস্টিনার। বেড়ে ওঠা উত্তর ক্যারোলিনায়। নর্থ ক্যারোলিনা স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ম্যাথেমেটিক্স থেকে স্নাতকের পরে নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিদ্যা ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন ক্রিস্টিনা। পদার্থবিদ্যায় একাধিক গবেষণা আছে তাঁর। কিন্তু পেশায় ছিলেন ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার।
আরও পড়ুন: বিক্রমের গর্ভ থেকে গড়িয়ে নামল প্রজ্ঞান, নাড়ি ছিন্ন করে চাঁদের বুকে ছ'পায়ে হাঁটছে
২০০১ সালে নাসার অ্যাকাডেমি প্রোগ্রাম থেকে মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন ক্রিস্টিনা। ২০১৩ সালে নাসার স্পেস-মিশনে যোগ দেন। গড্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করেছেন ক্রিস্টিনা। নেতৃত্ব দিয়েছেন একাধিক স্পেস-মিশনের। অজানার খোঁজে পাড়ি দেওয়াই ছিল একমাত্র লক্ষ্য।
২০০৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্টার্কটিক প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ছিল ক্রিস্টিনা কচ (Christina Koch) । সাড়ে তিন বছর কাটিয়েছেন উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দুর্গম এলাকায়। নাসার দক্ষিণ মেরুর স্পেস স্টেশনে হাড়হিম ঠাণ্ডায় দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়েছেন ক্রিস্টিনা (Christina Koch) । পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চষে ফেলেছেন দক্ষিণ মেরুর বিপদসঙ্কুল এলাকা। দক্ষিণ মেরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাকেন্দ্র আমুন্ডসেন-স্কট স্টেশনে তিনি যখন কাজ করতেন, সেখানকার তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নীচে ১১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুর্গম পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করার মানসিকতা ও সাহস তখনই তৈরি হয়ে যায়।
২০০৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্টার্কটিক প্রোগ্রামের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ছিল ক্রিস্টিনা কচ। সাড়ে তিন বছর কাটিয়েছেন উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দুর্গম এলাকায়। নাসার দক্ষিণ মেরুর স্পেস স্টেশনে হাড়হিম ঠাণ্ডায় দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়েছেন ক্রিস্টিনা (Christina Koch) । পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চষে ফেলেছেন দক্ষিণ মেরুর বিপদসঙ্কুল এলাকা। ক্রিস্টিনা জানিয়েছেন, দক্ষিণ মেরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাকেন্দ্র আমুন্ডসেন-স্কট স্টেশনে তিনি যখন কাজ করতেন, সেখানকার তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নীচে ১১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুর্গম পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করার মানসিকতা ও সাহস তখনই তৈরি হয়ে যায়।
৫০ বছর পর চাঁদে আবার মানুষ যাবে, নাসার আর্টেমিস মিশন শুরু হচ্ছে আজ থেকেই
আন্টার্কটিকায় হিমবাহ নিয়ে গবেষণা করেছেন দীর্ঘদিন। একটা সময় মেরু অঞ্চলে উদ্ধারকারী দলের সদস্যও ছিলেন ক্রিস্টিনা। ২০০৭ সালের পর থেকে জনস-হপকিনস ল্যাবোরেটরির অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স ল্যাবোরেটরিতে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন তিনি। গত বছর ১৪ মার্চ পৃথিবীর মাটি ছাড়েন ক্রিস্টিনা। সয়ুজ এমএস-১২-এ চেপে পৃথিবীর সব টান কাটিয়ে পাড়ি দেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে। তিনি ছিলেন একাধারে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, নভশ্চর, গবেষক (Christina Koch) । শূন্য অভিকর্ষজ বল বা জিরো-গ্র্যাভিটি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে এতদিন গবেষণা চালিয়েছেন ক্রিস্টিনা।
১১ মাসে অন্তত ছ’বার মহাশূন্যে হেঁটেছেন ক্রিস্টিনা কচ। গত বছর সবচেয়ে বেশি সময় মহাকাশের অতলান্ত অন্ধকারে স্পেস-ওয়াকের রেকর্ড গড়ের এই নভশ্চর। ‘All Women Spacewalk’-এর লাইভ স্ট্রিমিং সামনে এনে নাসা জানিয়েছিল ৭ ঘণ্টা ১৭ মিনিট মহাকাশে হেঁটে রেকর্ড করেছেন অ্যাস্ট্রো-ক্রিস্টিনা ও অ্যাস্ট্রো-জেসিকা। সাধারণত দেখা যায় স্পেস স্টেশনে কোনও যান্ত্রিক গলদ দেখা দিলে তার মেরামতি করতে বাইরে আসেন নভশ্চররা। এ বার সেই দায়িত্ব ছিল ক্রিস্টিনা ও জেসিকার উপর। কোনও রোবোটিক আর্ম নয়, প্রযুক্তির সাহায্যও নয়, পায়ে হেঁটেই স্পেস স্টেশনে নির্ধারিত ইউনিটে পৌঁছন দুই মহিলা। ভিতরে থেকে সেই সময় কম্যান্ড দিচ্ছিলেন চারজন পুরুষ নভশ্চর। ইউনিটে পৌঁছে ব্যাটারি লাগিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে নির্দিষ্ট সময়েই ফিরে আসেন ক্রিস্টিনা ও জেসিকা। ‘উইমেন’স হিস্ট্রি মান্থ’-এ ইতিহাস গড়ে নাসা।
নাসার রেকর্ড বলছে, এই ১১ মাসে অন্তত ৫,২৪৮ বার পৃথিবীকে পাক খেয়েছেন ক্রিস্টিনা। যা ২৯১ বার চাঁদে গিয়ে ফিরে আসার সময়ের সমান।
মহাকাশে এখনও অবধি মোট ৬৫ জন মহিলা গিয়েছেন। ২০১৮ সাল থেকে মাইক্রোগ্র্যাভিটি নিয়ে গবেষণা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। বিশ্বের ১০৬টি দেশে প্রায় ৩৬০০ জন মহাকাশবিজ্ঞানী ও নভশ্চর অংশ নিয়েছেন স্পেস-মিশনে। পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্পেস স্টেশনে ছ’মাসের বেশি কোনও নভশ্চর থাকেন না। মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলেন দীর্ঘসময় স্পেস স্টেশনে কাটালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যায়। মার্কিন নভশ্চর স্কট কেলি ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে পাড়ি দিয়েছিলেন। কাটিয়েছিলেন এক বছরের বেশি। আইএসএস থেকে পৃথিবীতে ফেরার পর স্কটকে নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন শুধু শারীরিক (ফিজ়িয়োলজিক্যাল) বদল নয়, জিনের বদলও ঘটেছে দীর্ঘ মহাকাশবাসে। তবে ক্রিস্টিনা বলেন, “প্রাণের ঝুঁকি থাকলেও ঐতিহাসিক স্পেসওয়াক যে কোনও নভশ্চরের জীবনেরই মূল লক্ষ্য। মহাকাশ-অভিযানের লিঙ্গভেদ নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। এই অভিজ্ঞতা অনুপ্ররেণা দেবে বাকিদের। আরও অনেক মহিলাই অজানাকে জানতে, অচেনা চিনতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।”