শেষ আপডেট: 21st August 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আকসাই চিনে লাল ফৌজের গতিবিধি নজরে রাখতে দৌলত বেগ ওল্ডিতে চিনুক কপ্টার নামিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। অন্যদিকে, লাদাখ সীমান্তে মোতায়েনের জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি চালাচ্ছে রাফাল ফাইটার জেট। রাতের বেলা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় কড়া নজরদারির জন্য পাঠানো হবে ফ্রান্স থেকে কেনা পাঁচটি রাফাল যুদ্ধবিমানকে। বায়ুসেনা জানাচ্ছে, রাফাল পৌঁছনোর আগে ভারতের তৈরি দুটি লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টারকে সীমান্তে পাঠানো হয়েছে। চিন-ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় এয়ার ডিফেন্স শক্তিশালী করার পাশাপাশি পাক সীমান্তেও কড়া নজরদারি চালাচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনা। ইতিমধ্যেই ক্ষিপ্র গতির লাইট কমব্যাট তেজস যুদ্ধবিমান নামানো হয়েছে ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে।
বায়ুসেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, সাদার্ন এয়ার কম্যান্ডের ৪৫ স্কোয়াড্রনের এলসিএ তেজস নামানো হয়েছে ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে। পূর্ব লাদাখের সীমান্ত শুধু নয়, পাক সীমান্ত থেকেও আক্রমণের সম্ভাবনা আছে। তাই সবদিকেই সুরক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তপোক্ত করা হচ্ছে।
স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতাতেও দেশের সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (হ্যাল) কাছ থেকে তেজসের মার্ক১এ ভ্যারিয়ান্ট কেনার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হ্যালের থেকে ৮৩টি এলসিএ তেজস কেনার চুক্তি করেছে বায়ুসেনা। এই ৮৩টি তেজসের ৭৩টি ফাইটার জেট ও ১০টি দুই আসনে ট্রেনার ভ্যারিয়ান্ট। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্সের সঙ্গে এই ৮৩টি তেজস ফাইটার জেট কেনার জন্য ৩৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে।
লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট, ওজনে হালকা কিন্তু ছুটতে পারে শব্দের চেয়েও বেশি বেগে। ডবল ইঞ্জিন, মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট তেজস। যেমন ক্ষিপ্র এর গতি তেমনি নির্ভুল এর নিশানা। রাফাল প্রায় সাড়ে ৯টন ওজন বইতে পারে, তেজসও ৯ টনের বেশি ওজন বয়ে নিয়ে যেতে পারে। ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে বানানো দ্বিতীয় যুদ্ধবিমান। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শক্তিতে এবং আক্রমণের ক্ষমতায় তেজস সুপারসনিক এয়ারক্র্যাফ্ট রাফালেরই সমতুল্য। ক্ষিপ্র গতির তেজসকে নিশানা করা যেমন অসম্ভব, তেমনি আকাশে একে ধাওয়া করে যাওয়ায় বেশ কঠিন। তেজসের ককপিটে থাকা পাইলট সহজেই শত্রুপক্ষের মিসাইলের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারেন।
তেজস মার্ক ১এ ভ্যারিয়ান্ট বা হ্যাল তেজসে আছে কমপাউন্ড ডেল্টা উইং। এয়ার-টু-সারফেস অর্থাৎ আকাশ থেকে ভূমিতে নির্ভুল টার্গেট করতে পারে তেজস। এর সাতটা হার্ড পয়েন্ট রয়েছে যার মাধ্যমে ৫ থেকে ৯ হাজার কিলোগ্রাম অবধি যুদ্ধাস্ত্র বইতে পারে তেজসের এই ভ্যারিয়ান্ট। দিনে-রাতে, আবহাওয়ার যে কোনও পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারে তেজস।
এদিকে লাদাখ সীমান্তে পাহারায় রয়েছে হ্যালের তৈরি লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার (LCH)। এই বছরের শেষেই হ্যালের থেকে এমন আরও ১৫টি হেলিকপ্টার কিনতে পারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সংস্থার চেয়ারম্যান আর মাধবন বলেছেন, সেনা ও বায়ুসেনার অন্তত ১৬০টি এমন হেলিকপ্টার প্রয়োজন। আমেরিকার অ্যাটাক কপ্টারের চেয়েও বেশি আক্রমণাত্মক এই এলসিএইচ কপ্টার।
ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, পূর্ব লাদাখ থেকে চিনা সেনার পশ্চাদপসারণ কতখানি হয়েছে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। প্যাঙ্গং এলাকা থেকে চিনের ফৌজ বেশ খানিকটা সরেছে বলে খবর। কিন্তু সেটা কতটা ঠিক, তা স্পষ্ট নয়। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৫ থেকে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৮ অবধি এলাকায় তাঁবু খাটিয়ে বসে রয়েছে চিনের বাহিনী। তাই ওই এলাকায় টহল দিতে পারছে না ভারতীয় সেনা। হট স্প্রিং সংলগ্ন পেট্রোল পয়েন্ট ১৭এ-তেও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি নয়। অন্যদিকে, পাক সীমান্তও চিন্তার কারণ। ইতিমধ্যেই আকসাই চিন লাগোয়া দৌলত বেগ ওল্ডির উপর দিয়ে চিনা যুদ্ধবিমানের আনাগোনাও লক্ষ্য করা গেছে। তাই দৌলত বেগে ইতিমধ্যেই টি-৯০ ও টি-৭২ যুদ্ধট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে ভারতীয় বাহিনী। রাতের বেলা এলাকা পাহাড়া দিচ্ছে অ্যাপাচে ও চিনুক কপ্টার। আর কয়েকদিনের মধ্যেই পূর্ব লাদাখে নামানো হবে ফ্রান্স থেকে কেনা পাঁচ রাফাল ফাইটার জেট।