শেষ আপডেট: 1st January 2021 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্যাঙ্গং সো রেঞ্জের দখল এখনও ছাড়েনি চিনের লাল ফৌজ। পাহাড়ি হ্রদের জলে এখনও ঘোরাফেরা করছে চিনের খান এগারো ইন্টাসেপটর বোট। উত্তর ও দক্ষিণ প্যাঙ্গংয়ের পাহাড়ি এলাকা দখল নেওয়ার জন্য দিবারাত্র নজর রেখে বসে রয়েছে চিনের বাহিনী। প্যাঙ্গং হ্রদ থেকে লাল সেনাকে হটাতে এবার অত্যাধুনিক ইন্টারসেপটর বোট নামাবে ভারত। এই ধরনের বোট তৈরির জন্য বরাত দেওয়া হয়েছে বলে খবর। আত্মনির্ভর ভারতে প্রতিরক্ষার সরঞ্জাম দেশেই তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট, মিসাইল থেকে যাবতীয় প্রতিরক্ষার অস্ত্রশস্ত্র এখন ভারতেই তৈরি করছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশ (ডিআরডিও)। ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, আধুনিক মানের ইন্টারসেপটর বোটের জন্য গোয়া শিপইয়ার্ড লিমিটেডকে বরাত দেওয়া হয়েছিল। তাদের কাজও শেষের দিকেই। ট্রায়ালের পরে বোটগুলি পাঠিয়ে দেওয়া হবে লাদাখে। প্যাঙ্গং লেকে চিনের পেট্রোলিং বোটের আনাগোনা এখনও রয়েছে। এই এলাকা ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্বে। নর্দার্ন আর্মি কম্যান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিএস জাসওয়াল বলেছেন, এই প্যাঙ্গং লেক জুড়ে টাইপ-৯২৮বি পেট্রোলিং বোট নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় চিনা সেনা। ভারতের বোটের তুলনায় যা অনেকটাই শক্তিশালী। ফলে, প্যাঙ্গং লেকে পেট্রোলিংয়ে ভারতীয় সেনাকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সীমান্তে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরে এই প্যাঙ্গং লেকেই চিনা নৌবাহিনীর গতিবিধি নজরে রাখতে হাই স্পিড ইন্টারসেপ্টর বোট পাঠিয়েছিল ভারতীয় নৌবাহিনী। তবে সেই সংখ্যা ছিল সীমিত। এখন আরও বেশি হাই-স্পিড বোট পাঠানো হবে প্যাঙ্গং লেকে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানাচ্ছে, প্যাঙ্গং সো রেঞ্জের উত্তরে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ ও ফিঙ্গার পয়েন্ট ৫ এর মাঝামাঝি এলাকা থেকে চিনের সেনা কিছুটা পিছিয়েছে ঠিক, তবে এলাকা পুরোপুরি ফাঁকা হয়নি। কয়েকটি তাঁবু, কিছু বুলডোজার ও সামরিক সরঞ্জাম সরানো হয়েছে মাত্র। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪-এ এখনও চিনা সেনা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। এমনকি সেনা সূত্র এও জানাচ্ছে, গালওয়ান নদী উপত্যকা বরাবর চিনা বাহিনীর সাঁজোয়া গাড়িও দাঁড়িয়ে রয়েছে এখনও। নদী উপত্যকায় তারা কংক্রিটের কালভার্ট তৈরি করেছিল। সেই পরিকাঠামো এখনও রয়েছে। নতুন করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সামরিক কাঠামো গড়তে শুরু করেছে চিন। এদিকে দুই দেশের সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পরেও রফাসূত্র বের হয়নি। ভারতকে সেনা পিছনোর কথা বললেও চিনের সেনাদের ভাবভঙ্গিতে পিছু হটার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সেনার এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, চিনের কোনও প্রস্তাবই মানা হবে না। গত ৩০ বছর ধরে সবধরনের চুক্তি ভেঙে চলেছে তারা। সীমান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তিও লঙ্ঘন করেছে। লিদাখের ফিঙ্গার পয়েন্টগুলি থেকে যে মুহূর্তে ভারত তার সেনা সরাবে, সেই মুহূর্তেই আক্রমণ করবে চিন। এটাই তাদের স্ট্র্যাটেজি। ভারত খুব ভাল করে এই কৌশলের সঙ্গে পরিচিত। চিন যতই কৌশল করুক না কেন, ভারত তার স্ট্র্যাটেজি সাজিয়েই রেখেছে। পাহাড়ি এলাকায় আরও বেশি সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের ১০ হাজার জওয়ানকে পাঠানো হয়েছে। এখন সীমান্তে ভারতীয় সেনার সংখ্যা ৯০ হাজার। আইটিবিপির ফোর্স মোতায়েন হলে সংখ্যা লাখে পৌঁছবে। ভারতের যুদ্ধট্যাঙ্ক ও একাধিক মিসাইল তৈরি আছে লাদাখে। আকাশে চক্কর কেটে সর্বক্ষণ নজর রাখছে বায়ুসেনার কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট। কাজেই কোনওদিক দিয়েই সুবিধা করতে পারবে না চিন।