শেষ আপডেট: 8th July 2024 12:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নবান্ন ও রাজভবনের সংঘাত যে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে রাজ্যপাল পদ থেকে সিভি আনন্দ বোসের অপসারণ এখন ক্রমশ অনিবার্য হয়ে উঠছে বলেই অনেকে মনে করছেন। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদেরও কেউ কেউ বহু আগে থেকে চাইছিলেন আনন্দ বোসকে সরানো হোক।
তবে লোকসভা ভোটের পর উল্লেখযোগ্যভাবেই যেন সমীকরণ বদলে গিয়েছে। সাউথ ব্লক সূত্রের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সহমতের মাধ্যমে নয়া রাজ্যপাল পাঠানো হতে পারে বাংলায়। নবান্ন ও রাইসিনা পাহাড়ের মধ্যে এ ব্যাপারে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে বলে ওই সূত্রের দাবি।
আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল, রাজভবনে সিভি আনন্দ বোসের বিকল্প মুখ বাছার প্রশ্নে উৎসাহ হারাতে শুরু করেছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। সূত্রের দাবি, লোকসভা ভোটের আগে থেকে সিভি আনন্দ বোসের অপসারণ চাইছেন শুভেন্দু অধিকারীরা। একই দাবি অমিত শাহদের কাছে জানিয়েছিলেন রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। স্বপন মোদী-শাহ ঘনিষ্ঠ বলেই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে পরিচিত। সম্প্রতি দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। নতুন খবর হল, রাজভবনের জন্য বিকল্প মুখ নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেননি বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
অতীতে বারবার দেখা গিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্যপাল নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকত। প্রথম ইউপিএ জমানায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করেই গোপালকৃষ্ণ গান্ধীকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। পরে এমকে নারায়ণনকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে নিয়োগের সময়েও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী জমানায় গত দশ বছরে সেই পরম্পরা আর দেখা যায়নি। তবে এবার লোকসভা ভোটের পর একটা বদলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কয়েকবার কথা হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের। রাজনাথ মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্য। এনডিএ-র শরিক ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলের নেতা নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা ছাড়া মমতার সঙ্গে রাজনাথের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল।
শুধু রাজনাথ নন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি ফোনে কথা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর। তা ছাড়া ন্যায় সংহিতা বাস্তবায়নের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। সূত্রের দাবি, রাজভবনের প্রসঙ্গও এই সব আলোচনায় উঠেছে।
এদিকে ঘটনাচক্রে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস গত প্রায় পক্ষকাল ধরে বাংলার বাইরে বাইরেই রয়েছেন। বেশ কয়েকদিন তিনি দিল্লিতে ছিলেন। তার মধ্যে একদিন একবেলার জন্য শিলিগুড়িতে ঘুরে আবার দিল্লি ফিরে যান। দুদিনের জন্য কলকাতায় এসে রাজ্যপাল আবার কেরল সফরে গিয়েছেন। বিজেপির এক রাজ্যনেতার কথায়, একটা ব্যাপারে এক্ষেত্রেও নজর করার মতো। জগদীপ ধনকড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীন দিল্লি সফরে গেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আনন্দ বোসের ক্ষেত্রে সেরকম কিছুও দেখা যাচ্ছে না। যার ইঙ্গিত ভাল বলে মনে করা হচ্ছে না।