শেষ আপডেট: 21 November 2023 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘নক্সী-কাঁথাটি বিছাইয়া সাজু সারারাত আঁকে ছবি, ও যেন তাহার গোপন ব্যথার বিরহিয়া এক কবি।’ জসিমউদ্দিনের কলমের আঁচড়ে যে নকশি-কাঁথা আঁকা হয়েছিল বাঙালির কাছে তার আবেদন সর্বকালীন। রুপাইয়ের জন্য সাজুর সমস্ত অপেক্ষা আর চোখের জলের সে যেন এক চিরকালীন গাথা। প্রীতিকণা নকশি-কাঁথায় ধরেছেন তাঁর আজীবনের লড়াইয়ের গল্প। অন্য মেয়েদেরও শিখিয়েছেন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। সম্প্রতি পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন প্রীতিকণা গোস্বামী।
বয়স তখন মাত্র দশ। সংসারে বাবা-মা,পাঁচ বোন। আচমকাই মারা গেলেন বাবা। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। পাঁচ বোনের মধ্যে বড় যে তিনিই। বোনেদের স্কুল যাওয়া, তাঁর কলেজ, কীভাবে চলবে সব! সংসারটাকেও তো ধরে রাখতে হবে। কী করবেন যখন ভাবছেন, তখনই এক নতুন দিগন্ত খুলল সামনে। এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলেন, যিনি সেলাইয়ের কাজ এনে বাড়িতে করতেন। সেই বন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর কাজগুলোই দেখছিলেন নেড়েচেড়ে। সুচে সুতো ভরে কিছুটা করেও দিলেন। বাড়ি ফিরে সব দেখে প্রীতিকণাকেও কাজে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বন্ধু।
কিন্তু কাজ আনতে গেলে ৫০ টাকা জমা রাখতে হবে যে। সেই ১৯৭৩ সালে সেই সম্বলটুকুও যে ছিল না। পরে এক তুতো দাদার থেকে ধার নিলেন ৫০ টাকা। শুরু হল কাজ। কাজের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। ধাক্কা এল আবার বিয়ের পরে। প্রীতিকণার কথায়, “বিয়ে হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখলাম এরা আমাদের থেকেও বেশি গরিব। তখন সব বাঁচাতে সেই সেলাইটাকেই আঁকড়ে ধরি আরও।”
পথ চলতে চলতেই যোগাযোগ হয় ক্রাফটস কাউন্সিল অফ ওয়েস্টবেঙ্গলের এক কর্ত্রীর সঙ্গে। তাঁরা তখন মেয়েদের সেলাই শিখিয়ে স্বাবলম্বী করার জন্য একটি সেন্টার খোলার তোড়জোড় করছেন। প্রীতিকণার সেলাই দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁকেই দেওয়া হল ‘নকশি-কাঁথা’র দায়িত্ব। তারপর শুধুই সামনের দিকে তাকানোর পালা। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সুচের ফোঁড়ে নানা রঙের ছবি এঁকেছেন তিনি। স্বীকৃতিও পেয়েছেন নানাস্তরে। পেয়েছেন পদ্মশ্রী পুরস্কারও। জীবনের ভাঁড়ার পূর্ণ হয়েছে তাঁর। বাধার প্রাচীর পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এখন অন্য মেয়েদেরও অভীষ্ঠে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছেন অনলস।