শেষ আপডেট: 3rd March 2025 15:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এ তল্লাটে ছেলে, মেয়ে পরীক্ষা দিতে বেরানোর সময় মাথায় হাত ঠেকিয়ে গুরুজনের বলেন, 'সাবধানে যাস, রাস্তায় হাতি বা বাঘের মুখোমুখি যেন না হতে হয়'!
বটেই তো! বাঘ, হাতির সঙ্গে কী আর লড়াই করা যায়। এদিকে বণ্যপ্রাণও রক্ষা করতে হবে। অগত্যা, মাধ্যমিকের মতো উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary Examination) পরীক্ষার্থীদেরও বিশেষ গাড়িতে করে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে গেল প্রশাসন। এছাড়াও বন্যপ্রাণ প্রভাবিত এলাকায় বাড়তি নজরদারিও চালানো হল। মোটের ওপর প্রথম দিনের পরীক্ষা শান্তিতেই মিটেছে!
বন দফতরের পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, "বন্যপ্রাণ প্রভাবিত এলাকায় ৩০টি গাড়িতে করে ৫০০ জন পরীক্ষার্থীকে এদিন নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া ও বাড়ি ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়। জঙ্গলের নজরদারিতে রয়েছে ৮টি টিম।"
কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, "৯৫জন পরীক্ষার্থীর জন্য ১০টি গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জঙ্গলের নজরদারিতে রয়েছে ১২টি টিম।"
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। এদিকে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং ঝাড়গ্রামের জঙ্গলের একাংশে আগে থেকেই ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে মহাকাল থুড়ি হাতির দল। তিন জেলার জঙ্গল মহলে রয়েছে প্রায় ৯৭টি হাতি। পাশাপাশি বাঘিনির খোঁজে ইদানির জঙ্গলমহলে আসা-যাওয়া শুরু করেছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারও!
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধেয় পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের মানবাজার-২ নং ব্লকের নেকড়ে গ্রামের জঙ্গলপথে বাইক চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বাঘের মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিলেন দিলীপ কুম্ভকার। ১৫ ফুট দূরে বাঘকে দেখে থেমে যান তিনি। বাঘটি অবশ্য কোনও দিকে না তাকিয়ে জঙ্গলে ঢুকে যায়।
পরে দিলীপের কথার সূত্র ধরে মানবাজার-২ নং ব্লকের নেকড়ে, বড়কদম-সহ কয়েকটি এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপও দেখতে পান বনকর্মীরা। পরের দিন বাঘটির উপস্থিতি জানা গিয়েছিল রাইকা পাহাড়ে। বর্ষশেষে বেলপাহাড়ি ঘুরে ওই পাহাড়েই ঘাঁটি গেড়েছিল বাঘিনি জিনাত।
গত শুক্রবার থেকে পুরুলিয়ার ওই আতঙ্ক ফিরেছে বেলপাহাড়িতেও। সেখানকার কয়েকটি এলাকায় নতুন করে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। শুধু জঙ্গল নয়, বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে জঙ্গল লাগোয়া চাষের জমিতেও।
এরপরই পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে জঙ্গলমহলের বন্যপ্রাণ প্রভাবিত এলাকায় বাড়তি উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন ও বন দফতর। জঙ্গলে হাতি থাকলেও এদিন সেই অর্থে দলমার দামালদের কোনও উপদ্রব দেখা যায়নি। এখনও পর্যন্ত নতুন করে দেখা মেলেনি 'হালুম'-এরও। ফলে মোটের ওপর শান্তিতেই মিটল উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষা।
টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে দ্য ওয়ালকে এক বনকর্তার সরস মন্তব্য, "ছেলেমেয়েরা পরীক্ষার হলে বসে পরীক্ষা দিল আর আমরা জঙ্গলে!"