শেষ আপডেট: 23rd August 2024 11:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: 'এখন আমরা মাত্র ১৭ জন আছি। এই হস্টেলে ১৬০ জন জুনিয়র মহিলা ডাক্তার ছিলাম এই তো কয়েকদিন আগেই। ৯ অগস্টের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন কোর্সে পড়া আমরা মেয়েরা একসঙ্গে এই হস্টেলেই ছিলাম।' কথাগুলি বলছিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমবিবিএসের চতুর্থ বর্ষে পড়া ২৪ বছরের এক ছাত্রী। কিন্তু ভয়ঙ্কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর ছাত্রী হস্টেল মোটামুটি শুনশান। অধিকাংশ মহিলা পড়ুয়াই ভয়ে হস্টেল ছেড়েছেন।
জুনিয়র ডাক্তাররা জানালেন, নার্সিং হস্টেল ছাড়া আর জি কর কলেজের অধিকাংশ হস্টেলই ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। ৯ অগস্ট থেকেই এই হস্টেল-ত্যাগের হিড়িক লেগেছে। সকলেরই চোখেমুখে এক অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। যাঁদের উপায় নেই, তাঁরাই পড়ে রয়েছেন। সহপাঠীকে হাসপাতালেরি ভিতরে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা কেউই মন থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না।
ওই ছাত্রী আরও বলেন, ৯ অগস্টের পর ছাত্রীরা হস্টেল ছাড়তে শুরু করেন। কয়েকজন দিনদুয়েক পর ফিরে আসেন। কিন্তু, হাসপাতালে ঢুকে গুন্ডাদের হামলার ঘটনার পর অধিকাংশ আবাসিক যাঁদের অধিকাংশই মেয়ে, তাঁরা হস্টেল ছেড়েছেন। ১৪ অগস্ট রাতে যে তাণ্ডব আমরা চোখের সামনে দেখেছি, তাতে অনেকেই এখানে নিরাপদে থাকা যাবে বলে মনে করছেন না।
আর জি কর হাসপাতাল চত্বরে পাঁচটি হস্টেল আছে। এর মধ্যে ডাক্তার ও পড়ুয়াদের আলাদা হস্টেল রয়েছে। গতকাল, ২২ অগস্ট প্রতিবাদী ডাক্তারদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে অভিজ্ঞ কৌঁসুলি অপরাজিতা সিং বলেছিলেন, ৭০০ আবাসিক ডাক্তারের মধ্যে মাত্র ৩০-৪০ জন মহিলা ডাক্তার এবং ৬০-৭০ জন পুরুষ ডাক্তার হাসপাতাল চত্বরে আছেন। ১৪ অগস্ট রাতের ওই হামলার পর বাকিরা ফিরে গিয়েছেন। ছাত্রীদের হস্টেলের অবস্থা তো একেবারে খালি।
দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়া এক ছাত্রী দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ১৪ অগস্ট রাতে আমরা যে কীরকম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, তা বলার নয়। ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। দুষ্কৃতীরা যখন ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন আমরা ও নার্সরা ভয়ে যে যেদিকে পারল ছুট লাগাল। আমরা সকলকে আমাদের হস্টেলে মধ্যে ঢুকিয়ে নিই। সেখানেই সারারাত ধরে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে আমাদের। কেউ এক মিনিটের জন্য দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি।
পুরুলিয়া থেকে পড়তে আসা এক পড়ুয়া বললেন, সিআইএসএফ মোতায়েন হওয়ার পর আমরা একটু নিশ্চিন্ত বোধ করছি। কিন্তু যতক্ষণ না তদন্তকারী সংস্থা সব অভিযুক্তকে ধরতে পারছে, ততক্ষণ স্বস্তি পাচ্ছি না। আমি এই হাসপাতালে ধর্ষক ও খুনিদের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারব না, স্পষ্ট বলেন তিনি। নার্সদের অবস্থা আরও শোচনীয়। তাঁরা জানালেন, মনের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করলেও হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ তাঁদের নেই।
৪২ বছরের এক অভিজ্ঞ নার্স জানালেন, ডাক্তাররা ডিউটি থেকে অব্যাহতি নিতে পারেন। একজন পুরুষ ডাক্তার মহিলা ডাক্তারের কাজ করে দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের কাজ তো অন্যরা করতে পারবেন না। আর জি কর হাসপাতালে দুটি নার্সিং হস্টেল রয়েছে। সবগুলিই ভর্তি রয়েছে, কারণ আমাদের কাজ করে যেতেই হবে। এই রকম ঘটনার পরেও আমাদের নাইট ডিউটি করতে হচ্ছে। এমনকী এখনও কোনও কোনও সময় একা কোনও নার্সকে ওয়ার্ডে রাত কাটাতে হচ্ছে। মারাত্মক ভয়ে আছি আমরাও, বলেন তিনি।