অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল।
শেষ আপডেট: 7 November 2024 15:01
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়ে টানা ২৫ মাস তিহাড় জেলে বন্দি ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। পুজোর আগে তিনি জামিন পেয়েছেন। তার পর গায়ের ব্যথা সারিয়ে ইদানীং দলের সাংগঠনিক কর্মসূচিতেও যোগ দেওয়া শুরু করেছেন। তবে এখনও যে প্রশ্নটা বীরভূমের জেলার রাজনীতিতে ঘোরাফেরা করছে তা হল, অনুব্রত মণ্ডল কি ফের জেলা সভাপতি হবেন? নাকি অনুব্রত জেলে যাওয়ার পর যে বিকল্প বন্দোবস্ত করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ধারবাহিকতাই থাকবে।
বৃহস্পতিবার এই কৌতূহল অনেকটাই নিরসন করতে চাইলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কিছু জেলায় তৃণমূলের সংগঠনে রদবদলের ব্যাপারে এদিন স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন অভিষেক। সেই সূত্রেই জবাব দিয়েছেন বীরভূমের প্রসঙ্গে।
অনুব্রতর ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই অভিষেক এদিন বলেন, "কেন বীরভূমে কোর কমিটিতে তো ভালই কাজ করছে। ভোটেও ভাল ফল করেছে। সেখানে বদলের দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না।"
অনুব্রতকে 'খাঁচার বাঘ' বলেছিলেন ফিরহাদ হাকিম। কেষ্ট মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সংগঠনের মনোবল চাঙ্গা রাখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ববি হাকিমকে পাঠিয়েছিলেন। তিনিই গিয়ে বলেছিলেন, 'অনুব্রত মণ্ডল হলেন খাঁচার বাঘ। সে এখন খাঁচায় তাই শিয়ালরা লাফালাফি করছে। বাঘ যেদিন বেরিয়ে আসবে শিয়ালরা সব খাঁচায় ঢুকে যাবে!'
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে অনুব্রতর উপর আস্থাশীল তা তিনি বারবার বুঝিয়েছেন। অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর গত দু’বছরে বীরভূমে কাউকে জেলা সভাপতি করা হয়নি। ৬ জনের একটা কোর কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়। তার একটা কারণ হল, বিকল্প মুখের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, অবশ্যই দলে গোষ্ঠী কোন্দল। অনুব্রত বাদ দিয়ে বাকি যাঁরা মুরুব্বি রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আপাত বনিবনা থাকলেও রেষারেষির চোরাস্রোত ছিল প্রবল।
তবে অনুব্রত জামিন পেলেও তাঁকে যে ফের জেলা সভাপতি নাও করা হতে পারে সে ব্যাপারে দ্য ওয়ালে আগেই লেখা হয়েছিল। এও লেখা হয়েছিল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তা মানতে রাজি নাও হতে পারেন। কারণ, কোর কমিটির তত্ত্বাবধানে বীরভূমে পঞ্চায়েত ভোটে শুধু ভাল ফল করেনি তৃণমূল, লোকসভা ভোটে জেলার দুটি আসনে আগের চেয়েও ব্যবধান বাড়িয়েছে। বিজেপি দাঁত ফোটাতেই পারেনি।
তা ছাড়া আরও দুটি বিষয় তাৎপর্যপূর্ণ। গত ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের শুদ্ধিকরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। স্বজনপোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল সেই সভায়। অনুব্রতর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এখনও প্রমানিত নয়। কিন্তু এও ঠিক, চাল কল, ডাল কল, জমি, জমা, প্রতিপত্তি, লটারি, সায়গল হোসেন মায় গোটা ব্যাপারটা প্রশ্নের উর্ধ্বেও নয়।একদা মাছ ব্যবসায়ীর এত সম্পত্তি ও আয়ের উৎস্য নিয়ে সন্দেহের পরিবেশ রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে গরু ও কয়লা সংক্রান্ত অমীমাংসিত কিছু প্রশ্ন। তা ছাড়া অনুব্রতর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগের তালিকাও লম্বা।
দ্বিতীয় বিষয় হল, তিহাড়ে যাওয়ার আগের অনুব্রত মণ্ডল ও জামিন পাওয়ার পর অনুব্রত মণ্ডলের মধ্যে যেন আসমান জমিন ফারাক। আগের মতো কথায়বার্তায় তেজ নেই। শরীরও শ্লথ হয়ে এসেছে। চুম্বকে বীরভূমে আপাতত স্থিতাবস্থা থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বাঘের আর সিংহাসনে ফেরা হয়তো হবে না।