অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষ আপডেট: 5th January 2025 00:05
রফিকুল জামাদার ও সুমন বটব্যাল
ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়! করোনার সময় নিজের সংসদ এলাকার মানুষের জন্য উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করে রাজ্য তো বটেই দেশজুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময় রাজনৈতিক রঙ বিচার না করে সর্বস্তরের মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে নজির গড়েছিল তাঁর 'ডায়মন্ড হারবার মডেল'।
এবার নতুন বছরের শুরুতেই নিজের লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের জন্য 'সেবাশ্রয় প্রকল্পে' বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করে আরও একটি নজিরের পথে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
সম্প্রতি আমতলায় চিকিৎসকদের সম্মেলন থেকে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের জন্য এই প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন সাংসদ। অভিষেক মাঝেমধ্যেই বলে থাকেন, 'আমি এক কথার ছেলে, কথা দিলে কথা রাখতে জানি'। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার, টানা তিন দিন ধরে হাতে কলমে তা চাক্ষুষ করলেন ডায়মন্ড হারবার বিধানসভার বাসিন্দারা।
মশাট মহাশক্তি এফপি স্কুল মাঠ, সংগ্রামপুর প্রাইমারি স্কুল মাঠ, নারায়ণপুর এফপি স্কুল মাঠ, সিংহবেড়িয়া প্রাইমারি স্কুল মাঠ, নুরপুর হাইমাদ্রাসা মাঠ, খাজেরপোল হাসপাতাল মাঠ, দেওয়ানতলা হাসপাতাল মাঠ, সাধুরহাট, শেওড়াহাটি, নহলা আইসিডিএস সেন্টারের কাছে, বান্ধব সমাজ ক্লাব মাঠ, নবাসন পীরতলা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, আমিরা এফপি স্কুল মাঠ, মানখন্ড ঠাকুরতলা, কড়াইবেরিয়া হাট, খোলাখালি হাট, কামারপোল বেনেপাড়া ঠাকুরতলার মাঠ, পাটদা মোড় উদয় সংঘ মাঠ, বোসপাড়া মন্দিরতলা মাঠ, ওএনজিসি ফুটবল মাঠ, বাগদা তাজ ক্লাব মাঠ ও নতুন হাট মোড়- ডায়মন্ড হারবার বিধানসভার মোট ৪১টি জায়গায় বাসিন্দাদের জন্য এই স্বাস্থ্য ক্যাম্পগুলির আয়োজন করা হয়েছে। বাড়ির অদূরে এভাবে বিনামূল্যে সুচিকিৎসা পেয়ে আপ্লুত বাসিন্দারাও। সেই তালিকায় শুধু তৃণমূল নয়, রয়েছেন বিরোধী দলের কর্মী, সমর্থকেরাও।
মশাট গ্রামের তরুণী স্মরনিকা সরকারের কথায়, "সত্যি কথা বলতে নেতারা ভোটের সময় অনেক প্রতিশ্রুতিই দিয়ে থাকেন, কিন্তু অভিষেকই প্রথম যিনি নিজের প্রতিশ্রুতির বাইরে গিয়েও এলাকার মানুষের সুখ, দুঃখের কথা ভাবেন।"
ঘড়ির কাঁটা মেনে তিনদিনই ৪১টি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। শেষ হওয়ার সময় বিকেল পাঁচটা থাকলেও তা গড়িয়েছে সন্ধে পর্যন্ত। এভাবে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা তুলে দেওয়ার জন্য শিবিরের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন অভিষেক। তাঁর উদ্যোগে সাড়া দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এলাকার আপামর সাধারণ মানুষকেও।
টুইটে সাংসদ লিখেছেন, 'সেবাশ্রম হল সেই প্রকল্প যা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করে। মানুষের উৎসাহ এবং সরকারের চেষ্টার ঐক্যবদ্ধ মেলবন্ধন ঘটল এই সেবাশ্রমে। এই প্রকল্পর মধ্যে দিয়ে আবারও প্রমাণিত হল কোনও কিছুর বদল আনতে হলে তা নীচুতলা থেকেই শুরু করতে হয়।'
Day 3 of #Sebaashray, and the numbers speak for themselves! Across 41 health camps in Diamond Harbour Assembly Constituency, 11,388 people received free, high-quality healthcare today. Out of these, 7,053 underwent diagnostic tests, 6,537 received essential medications, and 253… pic.twitter.com/UAZSr0ROjx
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) January 4, 2025
শিবিরের পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, বৃহস্পতিবার উদ্বোধনের দিন ৪১ টি শিবিরে ৫৬৮৯ জন উপস্থিত হন। এর মধ্যে ৩৩৪০ জন রোগীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়, ২৬০০ জনকে বিনামূল্যে ওষুধ এবং ১৮১ জনকে রেফার করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দিনে উপস্থিতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬,৯৪৫ জন। এদের মধ্যে ৪,৩১২ জনের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয় এবং ৩,৯৪২ জনকে ওষুধ বিতরণ করা হয়। রেফার করা হয় ২৩৬ জনকে। প্রথম দু'দিনের রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে তৃতীয় দিনের পরিসংখ্যান। তৃতীয় দিনে ৪১টি শিবিরে মোট ১১,৩৮৮ জন মানুষ উপস্থিতি হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ৭,০৫৩ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ৬,৫৩৭ জনকে ওষুধ বিতরণ এবং ২৫৩ জনকে রেফার করা হয়েছে।
শুধু ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা কেন্দ্র নয়, নিজের লোকসভার বাকি ছ'টি বিধানসভা কেন্দ্র – ফলতা, সাতগাছিয়া, বিষ্ণুপুর, বজবজ, মেটিয়াবুরুজ ও মহেশতলাতেও ১০ দিন করে এই সেবাশ্রয় প্রকল্প জারি রাখার কথা জানিয়েছেন সাংসদ। সাতটি বিধানসভা মিলিয়ে মোট ৭০ দিন ধরে স্বাস্থ্য শিবির চলার পর আগামী ১৬-২০ মার্চ টানা পাঁচ দিন নিজের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই একসঙ্গে চলবে মেগা ক্যাম্প।
কী কী চিকিৎসা হচ্ছে এই ক্যাম্পে?
বিনামূল্যে ডিজিটাল এক্স-রে, কার্ডিয়াক মনিটরিং সুবিধা এবং চোখের পরীক্ষার পাশাপাশি বিএমআই, রক্তচাপ, ব্লাড সুগার, হিমোগ্লোবিন, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, এবং ইসিজি-র মতো সাতটি প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক টেস্টও করা হচ্ছে।
রাজ্যে তো বটেই, দেশেও কখনও কোনও সাংসদের নিজস্ব উদ্যোগে এভাবে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে টানা ৭৫ দিন ধরে এভাবে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজনের নজির নেই।
প্রসঙ্গত, এবারের লোকসভা ভোটে শুধুমাত্র অভিষেকের লোকসভার জেলায় তিন দফায় ভোট হয়েছিল। গতবারের মার্জিনের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি ভোটে (৭ লাখ ১০ হাজারের বেশি ভোটে) জয়ী হয়ে রাজ্য তো বটেই দেশেও নজির গড়েছিলেন। নিজের মস্তিষ্ক প্রসূত এই স্বাস্থ্যশিবিরে দলমত নির্বিশেষে সাংসদ এলাকার মানুষের মন জয় করে অভিষেক যে এর সুদূরপ্রসারী ফল পাবেন তা মনে করছে বিভিন্ন মহল।
একান্ত আলাপচারিতায় ডায়মন্ড হারবারের বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাও স্বীকার করে নিচ্ছেন, বিনামূল্যে মানুষের চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে অভিষেকের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। অভিষেকের এই উদ্যোগ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নয়া বিপ্লবের সূচনা করে দিল বলে অনেকের মত।