শেষ আপডেট: 13th March 2025 14:06
ভোটার লিস্টে ভূতুড়ে কাণ্ড ধরতে যে তৎপরতা শুরু হয়েছিল, এবার তা যেন অভূতপূর্ব মোড় নিল! বাংলায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে যা নিয়ে অপার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কারণ, শনিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে যে বৈঠক ডেকেছেন, তা কেবল শুধু রাজ্য কমিটির গুটিকয়েক নেতা বা জেলা সভাপতিদের মধ্যে সীমিত নেই। বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে, দলের রাজ্য কমিটির সমস্ত নেতাকে। সব সাংসদ, সব বিধায়ক, জেলা পরিষদের সব সদস্য এবং কলকাতা সহ সকল পুরসভার সমস্ত কাউন্সিলরকে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ পাঠাতে শুরু করেছে তৃণমূল।
সন্দেহ নেই, এই ছবিটায় অনেকেই একটা বৈপরীত্য দেখতে পাচ্ছেন। লোকসভা ভোট-পরবর্তী সময়ে তৃণমূলের সাংগঠনিক বিষয়আশয় নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুব কমই সক্রিয় থাকতে দেখা গিয়েছে। বরং এও দেখা গিয়েছে যে, দলের বিধায়কদের বৈঠকে ডেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিচ্ছেন, তিনিই সংগঠন দেখবেন। তাঁর কথাই শেষ কথা। কিন্তু ইনডোরের বৈঠকের পর যেন রাতারাতি একটা বদল দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। যে বদলে ফের অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে দেখা সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসদের নিয়ে গঠিত কমিটি।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইনডোরে তৃণমূলের বর্ধিত কর্মিসভার বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, ভোটার লিস্টে ভূতুড়ে ভোটার ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই সব ভূত ঝাড়াই বাছাইয়ের জন্য রাজ্যস্তরে একটি স্ক্রুটিনি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কমিটিতে ছিলেন সুব্রত বক্সী, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম প্রমুখ। কমিটিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও রাখা হয়েছিল।
কিন্তু তৃণমূল ভবনে কমিটির প্রথম বৈঠকেই অভিষেক যাননি। তবে বৈঠকের পর সুব্রত বক্সী জানিয়েছিলেন, অভিষেক শিগগিরিই ভার্চুয়াল মাধ্যমে এ ব্যাপারে বৈঠক ডাকবেন। ভূতুড়ে ভোটার খুঁজতে স্ক্রুটিনি কমিটির ওই বৈঠকে জেলাওয়াড়ি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায়, সেই জেলাওয়াড়ি কমিটি গঠনও স্থগিত রাখার নির্দেশ আসে কালীঘাট থেকে। এর পরই অভিষেকের ডাকা বৈঠকের চেহারা আড়ে-বহরে বাড়তে শুরু করে।
কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ভোটার লিস্টে ভূতুড়ে ভোটার ঢুকে রয়েছে কিনা তা দেখার কাজ সকলের। তাই যেভাবে সমস্ত সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্য ও পুরসভার কাউন্সিলরদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে, তা সঙ্গত। কিন্তু ওই বৈঠকে ভূতুড়ে ভোটারের বিষয় ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক কথা হলে বা নির্দেশ কিংবা বার্তা দেওয়া হলে তা ইঙ্গিতপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
দলের অপর এক রাজ্য নেতার কথায়, ওই বৈঠকে শুধু ভূতুড়ে ভোটার নিয়ে কথা হলেও তা কম অর্থবহ নয়। কারণ, অভিষেক যেভাবে সবাইকে বৈঠকে ডেকেছেন, তার পর রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে গঠিত স্ক্রুটিনি কমিটিই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে অনেকটাই। এও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সংগঠনের স্নায়ুকেন্দ্রে কে রয়েছেন। কার বার্তা তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই শনিবারের বৈঠককে একটি নতুন অধ্যায় বা মাইলফলক বলে হয়তো চিহ্নিত করা যেতে পারে। কারণ, ছাব্বিশের ভোটের আগে ফের যেন গুছিয়ে প্যাড-গ্লাভস পরতে দেখা যাচ্ছে অভিষেককে। বাকিটা সময় বলবে।