অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও নির্মলা সীতারামন
শেষ আপডেট: 24th July 2024 16:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলার জন্য কেন্দ্রীয় অনুদান তথা বরাদ্দের প্রশ্নে বুধবার সরাসরি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চ্যালেঞ্জ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, বাংলার জন্য ক’পয়সা দিয়েছে কেন্দ্র, শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বলুন নির্মলা।
লোকসভায় বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে এদিন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ বলেন, “কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী আজ রাজ্যসভায় বলেছেন, কেন্দ্রের সরকার বাংলার প্রকল্পের জন্য গত ১০ বছরে যে টাকা তা বাস্তবায়নে ফেল করেছে রাজ্য। আমি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে বাংলায় নির্লজ্জভাবে বিজেপি হেরে যাওয়ার পর কেন্দ্রের সরকার ক’পয়সা বা টাকা বরাদ্দ করেছে সে ব্যাপারে একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন”।
অভিষেক বলেন, গত তিন বছরে বাংলাকে একশ দিনের কাজ প্রকল্পে এক টাকাও দেওয়া হয়নি। উল্টে ৫৯ লক্ষ শ্রমিকের মজুরি বাবদ কেন্দ্রের কাছে ৬৯১৩কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে রাজ্যের। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা খাতে ২০২১-২২, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ১০ পয়সাও দেওয়া হয়নি। ওই প্রকল্প খাতে বাংলার ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার পরিবারের মাথার উপর পাকা ছাদ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৮১৪০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। শুধু তা নয়, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন খাতে আরও ৮০০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে। এই টাকা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ওয়েলনেস সেন্টারের জন্য। শুধু কালার ব্র্যান্ডিংয়ের প্রশ্নে টাকা আটকে রেখেছে।
গত তিন বছরে লাগাতার একটা ছবি দেখা গেছে। তা হল শুভেন্দু অধিকারী-সুকান্ত মজুমদার সহ রাজ্য বিজেপির নেতারা বারবার দিল্লিতে গিয়ে বলেছেন, বাংলায় সরকারি প্রকল্পে চুরি হচ্ছে। তাই কেন্দ্রের বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হোক।
শুভেন্দুদের সেই দৌত্যের পর দেখা গেছে, বেনজির ভাবে বাংলায় একশ দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুরনো দুর্নীতির অভিযোগে বাংলায় পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক তথা প্রান্তিক মানুষ রোজগার গ্যারান্টি যোজনার আওতায় নতুন কাজ পাচ্ছেন না। সন্দেহ নেই একেই রাজনৈতিক ভাবে হাতিয়ার করে নিয়েছে তৃণমূল।
এদিন বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে অভিষেক আরও বলেন, গত তিন বছরে ৩৩৪টি কেন্দ্রীয় টিম বাংলার প্রকল্পের সমীক্ষা করতে গিয়েছিল। তারা যে সব প্রশ্ন তুলেছে, বার বার তার অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট তথা এটিআর প্রস্তুত করে দেওয়া হয়েছে। বাংলার নেতারা দিল্লিতে মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। দিল্লিতে আন্দোলন করেছেন। সেই আন্দোলন থামাতে মহিলা সাংসদদের পর্যন্ত চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলা তার বরাদ্দ পায়নি। বরং লাগাতার বঞ্চনা করে যাওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে।
অভিষেকের বক্তৃতার সময়ে ট্রেজারি বেঞ্চের তরফে বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু তাতে না দমে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ বলেন, মঙ্গলবার বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ উদ্যোগের কথা বলেছেন। সেই উদ্যোগের আওতায় রাখা হয়েছে বিহার, সিকিম, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড ও হিমাচল প্রদেশকে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গকে সেই তালিকায় রাখা হয়নি। অথচ প্রতি বছর উত্তরবঙ্গ কঠিন বন্যা সমস্যায় ভোগে। উত্তরবঙ্গের ৮টি লোকসভার মধ্যে ৬টিতেই বিজেপির সাংসদ রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা এ ব্যাপারে কিচ্ছু বলছেন না। আমি আশা করি, এটা জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের মানুষও দেখছেন।
বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার বিষয়টিতে অভিষেক গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শান দিচ্ছেন। গত বছর ২ অক্টোবর অর্থাৎ ঠিক পুজোর আগে তিনিই এ ব্যাপারে তৃণমূলের মন্ত্রী, সাংসদ, নেতাদের নিয়ে দিল্লি অভিযানে গিয়েছিলেন। পরে কলকাতায় রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন। বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা, আর্থিক অবরোধের বিষয় এবার লোকসভা ভোটে তৃণমূলের অন্যতম ইস্যু ছিল। তৃণমূল মনে করে, দলের সেই রাজনীতি কার্যকরী হয়েছে। সম্ভবত সেই কারণে কৌশলগত ভাবে বঞ্চনার অভিযোগকে বুধবার নতুন ভাবে জাতীয় মঞ্চে নিয়ে গিয়ে ফেললেন অভিষেক।
বৃহস্পতিবার দিল্লি সফরে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও একই বিষয় দিল্লিতে গিয়ে তুলবেন। তার আগে এদিন প্রেক্ষাপট রচনা করে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।