শেষ আপডেট: 26th September 2024 13:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লোকসভা ভোটের পর থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেন সংগঠন ও সরকারের থেকে কিছুটা আড়োআড়ো-ছাড়োছাড়ো। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করছিল, আমলাতন্ত্রের স্থবিরতায় খুশি নন অভিষেক। দল ও প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল চান, সেই সঙ্গে ক্ষিপ্রতাও। অভিষেকের এহেন একগুঁয়ে জেদের কারণে আগেও যা ঘটেছে, এবারও তার অনেকটাই পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। ২১ জুলাই বা ২৮ অগস্টের মতো দলের কিছু প্রথাগত কর্মসূচি ছাড়া সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক যেন কিছুটা দূরত্ব রেখেই চলছিলেন দলের সঙ্গে।
এ সপ্তাহের শেষে বা সামনের সপ্তাহের গোড়ায় চিকিৎসার জন্য আরও একবার বিদেশ সফরে যাওয়ার কথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, তার আগে স্থবিরতা কাটার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।
তা কীরকম?
ওই সূত্রের মতে, এমন নয় যে অভিষেক কোথাও নিজের অনুগামীদের বসাতে চান। তেমন কোনও পছন্দের ব্যাপার নেই। কিন্তু প্রশাসনের একাংশে যে জাড্য জাঁকিয়ে বসেছে, তার নিরাময় চাইছিলেন ‘নাম্বার টু’। সেদিক থেকে বুধবার নবান্নে বাংলা আবাস যোজনা নিয়ে যে বৈঠক হয়েছে তা ইতিবাচক। অভিষেক ঘোষণা করেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে আবাস যোজনায় রাজ্য সরকার তার কোষাগার থেকে টাকা দেবে। বুধবার নবান্ন একটা ডেডলাইন ছকে ফেলেছে। তা হল ২০ ডিসেম্বর। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখের মধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা যাবে।
এই ক্ষিপ্রতার নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট যুগলবন্দি দেখা যাচ্ছে বলে মত তাঁদের ঘনিষ্ঠ জনেদের। তাঁদের এও দাবি, এই বদল শুধু প্রশাসনে দেখা যাবে না, তা শিগগির দেখা যাবে সংগঠনেও।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুজো পুজো করে বেশ অনেকটা সময় কাটবে। এই পরিসরেই অভিষেক বিদেশে চিকিৎসার জন্য থাকবেন। অক্টোবরের ২০ তারিখ নাগাদ তাঁর ফেরার কথা।
তবে সূত্রের মতে, অভিষেক বিদেশে থাকলেও বাংলায় শাসক দলের বদল ঘটে যেতে পারে। কারণ, কোথায় কী ধরনের পরিবর্তন ঘটবে আই-প্যাক ও অভিষেকের তত্ত্বাবধানে তার একটা নকশা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। তার বাস্তবায়নের জন্য সাধারণের সম্পাদকের আর সশরীরে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই।
নবান্নের একটি সূত্রের মতে, প্রশাসনের মধ্যে যে জাঢ্য নিয়ে অভিষেকের অসন্তোষ রয়েছে তার জন্য আমলাদেরও পুরোপুরি দায়ী করা যায় না। কারণ, সরকারের আর্থিক সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প খাতে কেন্দ্র প্রায় দু’বছর ধরে বরাদ্দ বন্ধ করে রেখেছে। তার ফলে মূলধন খাতে বা পরিকাঠামো খাতে খরচের সুযোগ কমছে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, নেতিবাচক পরিস্থিতিতে অনেক সময়েই দেশ বা বিভিন্ন রাজ্যের সরকারের মধ্যে নীতিপঙ্গুতা দেখা যায়। দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় এই শব্দ বহুল ভাবে প্রচারিত হয়েছিল। ইংরেজিতে তাকে বলা হত পলিসি প্যারালিসিস। মনমোহন সরকার সম্পর্কে সেই ধারণা ক্রমশ মজবুত হওয়ায় কংগ্রেসের রাজনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল। বাংলায় সে অর্থে নীতিপঙ্গুতা নেই ঠিকই। তবে বাস্তবায়নের পথে আর্থিক বাধা রয়েছে। তা ছাড়া প্রশাসনের মধ্যেও একাংশের কাজ করার সদিচ্ছার অভাব দেখা যাচ্ছে।
অভিষেক হয়তো বুঝতে পারছেন, এই স্থবিরতা শাসক দলের রাজনৈতিক স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল নয়। তাই একটা ঝাঁকুনি দিতে চাইছেন। সম্ভবত এবার সে ব্যাপারে তাঁর ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে সহমতের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।