শেষ আপডেট: 15th April 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা আতঙ্কে কাঁপছে বিশ্ব। মহাকাশ কিন্তু রয়েছে অন্য মেজাজে। প্রতি মুহূর্তে একের পর এক রহস্যের পর্দা সরিয়ে চলেছে। করোনায় মৃত্যু, সংক্রমণ, আতঙ্ক থেকে চোখ সরিয়ে ফের টেলিস্কোপে নজর রাখতেই চমকে উঠলেন বিজ্ঞানীরা। আমাদের ছায়াপথ মানে মিল্কি ওয়ে (Milky Way)গ্যালাক্সির মাঝেই যেন লালচে-নীলচে ফুল ফুটেছে। কী উজ্জ্বল সেই ফুল, যেন আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে। লহমায় লহমায় রঙও বদলাচ্ছে। লাল রিঙকে কেন্দ্র করে ফুলের নীলচে পাপড়িরা যেন নেচেই চলেছে। নাচ থামার কোনও লক্ষণ নেই। ফুল তো নয়, আসলে একটি বিরাট তারা। ছায়াপথের রাক্ষুসে ব্ল্যাকহোলের কাছাকাছি চলে এসে এমন ছটফট করছে। ইউরোপিয়ান সাদার্ন অবজারভেটরির (ESO)দীর্ঘতম টেলিস্কোপে ধরা দিয়েছে এই তারা। নাম এস২ (S2) । ভারী জাঁদরেল ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের আকর্ষণের কারণে নিজের কক্ষপথে ঘুরে ঘুরে নেচে চলেছে এই তারা। আজ বৃহস্পতিবার ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ জার্নালে ছায়াপথের এই ‘ডান্সিং স্টার’-এর কথা লিখেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। https://twitter.com/ESO/status/1250688777464565760 ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ফিজিক্স (MPE)-এর ডিরেক্টর রেইনহার্ড গেঞ্জেল বলেছেন, এই তারার কক্ষপথ স্থির নয়। ব্ল্যাকহোলের টানে কাছাকাছি চলে গেলে এক অদ্ভুত চক্রাকারে তার কক্ষপথ পরিবর্তিত হতে শুরু করে। যেন মনে হয় লাফালাফি শুরু করেছে ওই বিশাল নক্ষত্র। সেই সঙ্গে তার কক্ষপথও এঁকেবেঁকে চলেছে। এমন দাপাদাপির কারণেই যেন মনে হচ্ছে মহাশূন্যে ফুল ফুটেছে। ঠিক ফুলের পাপড়ির মতো আকার নিচ্ছে তারার কক্ষপথ। তার ওপর ছায়াপথের দানব ব্ল্যাকহোলের টানাটানিতে তার মধ্যে থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। https://twitter.com/ESO/status/1250690587919101952 বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রথমবার ব্ল্যাকহোলের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছে ওই তারা। তাই একটা জোরালো আকর্ষণ কাজ করছে তার উপর। আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানেই রয়েছে ওই দানব ব্ল্যাকহোল, যার নাম ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’। এই ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন রাক্ষুসে ব্ল্যাকহোল। যেমন বড় তার চেহারা (সূর্যের চেয়ে আকারে, আয়তনে, ভরে অনেক বড়), তেমনি খাই খাই তার স্বভাব। নিজের চারপাশে এসে পড়া যে কোনও মহাজাগতিক বস্তুকে নিজের দিকে টেনে নিতে পারে। জোরালো অভিকর্ষজ বলের টানে সেগুলি আর ব্ল্যাকহোল থেকে বেরিয়ে পারে না। মূলত কমজোরি তারা, গ্যাসীয় মেঘদের দিয়েই ভূরিভোজ সারে এই ব্ল্যাকহোল। এটি রয়েছে আমাদের থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। সাধারণত কোনও তারা কাছে এসে পড়লে তাকে গিলে খেতে এমন ধরণের রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলের সময় লাগে এক থেকে দু'-তিন বছর। কোনও তারাকে যদি ব্ল্যাকহোল গিলে খেত, তা হলে আলোর ঝলসানি দেখা যেত এক থেকে দু'-তিন বছর ধরে। এই বল্যাকহোল ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’-এর ঔজ্জ্বল্যও কখনও বাড়ে, আবার কখনও কমে। এই ঔজ্জ্বল্যের বাড়া-কমা দেখে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন কোনও মহাজাগতিক ঘটনা ঘটছে আমাদের ছায়াপথে। সাধারণত দেখা যায়, যে কোনও গ্যালাক্সির মাঝে থাকা ব্ল্যাক হোলের অভিকর্ষ টান সাঙ্ঘাতিক হয়। ঘন জমাট বাঁধা গ্যাসের মেঘ, কাছে এসে পড়লে ওই রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলগুলি তাদের জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে সেগুলিকে গিলে নেয়। সেগুলি আর ব্ল্যাক হোল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। খিদে মিটলে তার ভিতর থেকে উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যায়। যেগুলি আসলে প্রচণ্ড শক্তিশালী এক্স-রে বা গামা-রশ্মির স্রোত। যতক্ষণ এই খাবার প্রক্রিয়া চলে, ততক্ষণ এই তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ বেরিয়ে আসতে থাকে গ্যালাক্সি থেকে এবং মহাশূন্যে ভেসে বেড়ায়। খাওয়া শেষ হয়ে গেলে, এক্স রে নির্গমনও বন্ধ হয়ে যায়। তখন আলোর দপদপানি নিভে যায়। তবে এবারের ঘটনায় অবশ্য সুপারস্টার এস২ নক্ষত্রই। দানব কৃষ্ণগহ্বরের কাছাকাছি গিয়েও তার ফূর্তির অভাব নেই। দিব্যি আলো ছড়িয়ে নেচে চলেছে। ২০১৫ সালে আমাদের ছায়াপথ বা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মাঝে ৩৫টি কচি তারার খোঁজ মিলেছিল। এত দিন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা ভাবতেন, আমাদের ছায়াপথে নতুন কোনও ‘পড়শি’ আর আসবে না। যারা মিল্কি ওয়ের ‘বাসিন্দা’, তারা কয়েকশো কোটি বছর ধরেই রয়েছে। নতুন তারারা সব ধারণা ভেঙে দেয়। বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, ওই তারাদের বয়স বড়জোর দশ কোটি বছর। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সবচেয়ে কচি তারার বয়স আড়াই কোটি বছরের বেশি নয়। অবশ্য এই তারার বয়স বা ঠিকুজি কুষ্ঠী এখনই জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তার জন্য খোঁজ খবর চলছে।