চৈতালী চক্রবর্তী
দুর্গাপুজোর পালা চুকেছে। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের আদরে এখনও ক্যালেন্ডারের পাতায় জ্বলজ্বল করছে কালীপুজো ও ভাইফোঁটা। কথায় বলে রসনার সঙ্গে উপাসনার একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। দেবদেবীর পুজোর ফর্দতেও যেমন ভোগের কেনাকাটার ফির
দুর্গাপুজোর পালা চুকেছে। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের আদরে এখনও ক্যালেন্ডারের পাতায় জ্বলজ্বল করছে কালীপুজো ও ভাইফোঁটা। কথায় বলে রসনার সঙ্গে উপাসনার একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। দেবদেবীর পুজোর ফর্দতেও যেমন ভোগের কেনাকাটার ফিরিস্তি, তেমনি ঋতুর সঙ্গে মানানসই করে মানুষ সাজিয়েছে তার ইষ্ট দেবতার ভোগের থালা। বাংলার চিরকালীন পার্বণগুলির যে কোনওটির দিকে তাকালেই বোঝা যায়, সুখাদ্য ছাড়া পার্বণের কথা কোনও কালে ভাবতেই পারেনি রসনা রসিক বাঙালি। কালীপুজো ও ভাইফোঁটাও তার ব্যতিক্রম হবে কেন। আলোর উৎসবকে আরও প্রাণোজ্জ্বল করতেই তো মুখরোচক খাবারের হাতছানি। ৬,৭ ও ৮ নভেম্বর আপনার রসনায় ঝড় তুলতে তাই পসরা সাজিয়েই রেখেছে ‘অওধ ১৫৯০’, ‘মাস্টার ডিমসাম’ এবং ‘চ্যাপ্টার ২’।
পুজো মানেই তাকে ঘিরে বাংলায় উৎসবের মেজাজ তৈরি হয়। আর উৎসব মানেই দেদার খানাপিনা। হাতা-খুন্তির পালা চুকিয়ে কব্জি ডুবিয়ে চর্ব-চোষ্য মোগলাই, চাইনিজ বা কন্টিনেন্টাল। একান্নবর্তী সংসারের মা-ঠাকুমাদের দায়িত্ব পালন করছেন হোটেল-রেস্তরাঁর মালিক এবং রাঁধিয়ের দল। কোথাও খানা জব্বর, তো কোথাও পরিবেশ লা জবাব। কেতাদুরস্ত পোশাক পরে জামাই আদরে আপনাকে বরণ করে নেবে যে রেস্তোরাঁ। দুই ভোজনরসিক ভাই শিলাদিত্য ও দেবাদিত্য চৌধুরীর দৌলতে ‘অওধ ১৫৯০’, ‘মাস্টার ডিমসাম’ বা ‘চ্যাপ্টার ২’ যেখানেই ঢুঁ মারুন না কেন, রসনাতুষ্টির পাশাপাশি মনেরও পুষ্টি হবে এটা গ্যারান্টি।
[caption id="attachment_47635" align="alignleft" width="300"] ঝিঙ্গা বিরিয়ানি[/caption]
শুরুটা হতে পারে ‘অওধ ১৫৯০’ দিয়ে। কারণ বিরিয়ানির সঙ্গে তো বাঙালির শুধু পেটের নয়, আত্মারও সম্পর্ক। আর কালীপুজো, ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে নতুন নতুন আইটেমের জালি তো সাজিয়েই রেখেছেন শেফরা। শুধু পাত পেড়ে বসলেই হল। অওধ মানেই নরম তুলতুলে মাংস আর গরম ধোঁয়া ওঠা সুগন্ধী চালের ফাঁক দিয়ে উঁকি
[caption id="attachment_47636" align="alignright" width="300"] নেহারি খাস[/caption]
দেওয়া পেলব আলু। অওয়াধি ঘরানা অবশ্য কখনওই আলুকে জাতে তোলেনি। তবে সুদূর লখনউ থেকে নবাবের হাত ধরে কলকাতায় এসে বিরিয়ানিতে এই নয়া সংযোজন শুধুমাত্র বাঙালির রসনাকে তৃপ্ত করতেই তৈরি। খাস লখনউ নবাবি মহলের চাকচিক্য রেস্তোরাঁর আনাচ কানাচে, পরিবেশনের থালা-বাটিতে, রান্নার কৌশলে আর বাবুর্চিদের হাতের জাদুতে। অওধে কান পাতলে নবাব ওয়াজিদ আলির সরোদের শব্দ আজও শোনা যায় কিনা জানা নেই, তবে সুস্বাদু খাবারের সঙ্গে সেখানে সঙ্গত করে আখতারির গান।
রেস্তোরাঁর খাস শেফ জানালেন, বাড়িতে রান্নার পাট প্রায় চুকেই গেছে। তাই ফোঁটা দিয়েই ভাইকে বগলদাবা করে বিরিয়ানির স্বাদ চাখতে চলে আসেন অধিকাংশ বাঙালিই। অওধ সটাইল হান্ডি বিরিয়ানি চাখতে চাখতেই পাতে চলে আসবে শেফের পছন্দের তুলতুলে গলৌটি কাবাব। চাইলেই পাবেন রান বিরিয়ানি, গোস্ট ভুনা, মাহি কালিয়া বা লাসুনি পালক। চামচ আর প্লেটের সঙ্গে সন্ধি করে জগৎ-সংসার ভুলে যত খুশি কাবাব খান, কে বারণ করেছে!
[caption id="attachment_47637" align="aligncenter" width="486"] পনির কোর্মা[/caption]
বিরিয়ানিতেও থাকছে বৈচিত্র্য। অওয়াধি হান্ডি বিরিয়ানির সঙ্গেই মনকে তৃপ্ত করবে ঝিঙ্গা বিরিয়ানি। সাইড ডিশে পাতে রাখতে পারেন অওয়াধি সুগন্ধী মাহি, কর্ন শিক কাবাব, আম খাস, নেহারি খাস। লখনউ পরোটার সঙ্গে ঝালে-ঝোলে খেতে পারেন শাহি ডাল, মুর্গ ইরানি বা পনির কোর্মা। ভোজ মানেই শেষ পাতে মিষ্টি মাস্ট। তার জন্য অবশ্যই শাহি টুকরা। ৬, ৭ এবং ৮ নভেম্বর আপনাকে স্বাগত জানাতে তৈরি দেশপ্রিয় পার্কে, সল্ট লেক সেক্টর ১ ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সরণির ‘অওধ ১৫৯০’।
উৎসবের আবহকে আরও মাখোমাখো করতে যদি পুরনো কলকাতার রেট্রো টাচ চান, তাহলে ‘চ্যাপ্টার ২’তে আপনাকে স্বাগত। রেস্তোরাঁর আনাচ-কানাচে বিশ শতকের মাঝপর্ব থেকে ৬০-৭০ এর দশকের পার্ক স্ট্রিটের আবহ। স্বাদে-গন্ধেই তার আবেদন। যে অ্যাংলো ঘরানা এক সময় ডাল-ভাতের বাঙালিকে পর্ক-স্টেকে বাঁচতে শিখিয়েছিল তাকেই টাইম মেশিনে চাপিয়ে নয়া ফ্লেভারে হাজির করেছে ‘চ্যাপ্টার ২’।
খাবার সঙ্গেই ব্যান্ডের গানের সঙ্গত। দিওয়ালি ও ভাইফোঁটা স্পেশাল ক্রিম অব টোম্যাটো স্যুপ এক অন্য জগতে নিয়ে যাবে এ কথা হলফ করে বলতে পারি। সেই সঙ্গেই রয়েছে কর্ন মাশরুম টার্ট, প্রণ ককটেল, ইংলিশ ফিশ ফ্রাই। মাশরুম সসে ডুবিয়ে চিকেন স্টেকের সঙ্গেই বাঙালির চিরকালীন পছন্দের মাটন পেপার স্টেকও পাতে পড়তে পারে একই সঙ্গে। চিকেন স্ট্রগনফ, জাম্বো প্রণ থারমিন্ডর বা শাকাহারীদের জন্য ভেজিটেবল ক্যান্নেলোনিও আপনাকে আকৃষ্ট করবে। ডেসার্টের জন্য চেয়ে নিতে পারেন ক্যারামেল কাস্টার্ড। মুখে লেগে থাকবে।
টেরেটি বাজারের চিনা গলি ঘুরে ক্লান্ত বাঙালি এখন খাস চিনা পাড়ার খাবারের স্বাদ পেতে ছোটে ‘মাস্টার ডিমসাম’-এ। মনের মতো মোমো-নুডলস থেকে সুয়ে মাই—চিনা স্ন্যাকস থুড়ি ডিমসামের স্বাদ চাখো, চাইনিজও হল আবার চিনা শেফের হাতের ছোঁয়াও রইল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সরণি হোক বা অ্যাক্রোপলিস মল বা রাসবিহারীর লেক মলের ‘মাস্টার ডিমসাম’-এর স্টোরে পা রাখলে ঠিক এমন অনুভূতিই হবে যে কোনও ভোজন রসিকের।
নুডলসে ভাসমান ফিশ মেটাবল স্টিক, পালং-মাশরুমের সাহচর্চে কর্ন বল স্টিক, ফ্রায়েড চিকেন ওনটোন, পর্ক বাও বা হংকং স্টাইলে পুরুষ্টু ভেড়ার মাংসের স্বাদে জমে যাবে দিওয়ালি ও ভাইফোঁটা। ডিমসাম নামেই যেন রয়েছে জাদু। হৃদয়ের ছোঁয়া। চিনা ভাষায় ‘ডিম’ মানে হল স্পর্শ আর ‘সাম’ মানে হৃদয়। দুয়ে মিলে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক অনুভূতি। হৃদয়ের সঙ্গে পেটকেও তৃপ্তি দিতে তাই ‘মাস্টার ডিমসাম’-এ আপনাকে স্বাগত।
তাহলে আর দেরি কেন! আর তো মাত্র কটা দিন। খাবারের লিস্টি বানানো শুরু হয়ে যাক এখনই।
The Wall-এর ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন