শুক্রবার এ ব্যাপারে শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের (DA Case Supreme Court Order) ওয়েবসাইটে যে নির্দেশ আপলোড করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, শুক্রবার থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার ২৫ শতাংশ দিয়ে দিতে হবে রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীদের।
সুপ্রিম কোর্ট
শেষ আপডেট: 17 May 2025 19:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-র (DA) ২৫ শতাংশ ৬ সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার এ ব্যাপারে শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের (DA Case Supreme Court Order) ওয়েবসাইটে যে নির্দেশ আপলোড করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, শুক্রবার থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার ২৫ শতাংশ দিয়ে দিতে হবে রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীদের। যার অর্থ ২৭ জুনের মধ্যে রাজ্য সরকারকে ওই টাকা দিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার ডিভিশন বেঞ্চ অন্তর্বর্তী নির্দেশে আরও জানিয়েছে—
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ডিএ মামলা যে পথে এগিয়েছে—
বৈষম্যের অভিযোগ:
মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারি কর্মীদের জীবিকা রক্ষায় যে ভাতা দেওয়া হয়, তা-ই ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা। কেন্দ্রীয় সরকার বছরে দু’বার মূল্যসূচকের (Consumer Price Index) ভিত্তিতে এই ভাতা বাড়ায়। কিন্তু রাজ্য সরকারগুলোর ক্ষেত্রে এই নিয়ম বাধ্যতামূলক নয়—তারা নিজেদের মতো করে ডিএ নির্ধারণ করে।
পশ্চিমবঙ্গে বহুদিন ধরেই কেন্দ্রের তুলনায় ডিএ-র হার অনেক কম। এই ব্যবধান বাম জমানা থেকেই রয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৫৫% ডিএ পান, রাজ্য সরকারি কর্মীরা পান মাত্র ১৮% ডিএ।
প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায়
২০১৯ সালে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন ‘কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ’ রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে যায়। তাঁরা দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিএ দিতে হবে। এবং বকেয়া ডিএ বাবদ সমস্ত অর্থও মেটাতে হবে।
ট্রাইব্যুনাল তাদের পক্ষে রায় দেয়। সেই সঙ্গে জানায়, ডিএ কোনও দয়ার দান নয়, বরং বেতনের একটি আইনসম্মত উপাদান। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ডিএ বাড়ানো না হলে তা অবিচার ও বৈষম্যের সামিল।
উচ্চ আদালতের স্পষ্ট বার্তা
ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার কলকাতা হাই কোর্টে যায়। তবে ২০২২ সালের মে মাসে বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও রবীন্দ্রনাথ সমন্তর বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, রাজ্যের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।
রায়ে বলা হয়, ন্যায্য মজুরি পাওয়ার অধিকার কর্মচারীদের সাংবিধানিক অধিকার। সরকার নিজের খেয়ালে কর্মচারীদের ডিএ থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। কেন্দ্রের মতো হারে ডিএ দিতে হবে এবং যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে বকেয়া মেটাতে হবে।
রাজ্যের প্রতিক্রিয়া ও যুক্তি
এই রায় মেনে না নিয়ে, ২০২২ সালের নভেম্বরে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন (SLP) দাখিল করে। সেখানে তাদের তিনটি মূল যুক্তি ছিল: এক, কেন্দ্র ও রাজ্যের ডিএ সমান হওয়া কোনও বাধ্যতামূলক বিষয় নয়। দুই, প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব আর্থিক কাঠামো ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। এবং তিন-কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে একই ডিএ হার চাপিয়ে দিলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর নমনীয়তা ক্ষুণ্ণ হবে।
এদিকে রাজ্য সরকার মাঝেমধ্যে কিছু শতাংশ বাড়তি ডিএ দিলেও, কর্মীদের মতে তা যথেষ্ট নয়। ২০২৪ সালে ৩% ও ২০২৫ সালের এপ্রিলে ৪% হারে ডিএ বাড়ানো হলেও আন্দোলনের তীব্রতা কমেনি। কর্মী সংগঠনগুলি দফায় দফায় কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে।
সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ
শেষমেশ শুক্রবার ১৬ মে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল ও সন্দীপ মেহতার ডিভিশন বেঞ্চ এক অন্তর্বর্তী রায় দেয়, বকেয়া ডিএ-র অন্তত ২৫ শতাংশ এখনই দিতে হবে। পরবর্তী শুনানি হবে ৪ অগস্ট।