শেষ আপডেট: 6th January 2024 08:42
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে মন্ত্রীকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও এতটা বেগ পেতে হয়নি। শুক্রবার সকালে সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের খোঁজে গিয়ে যেভাবে মারমুখী জনতার আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে তদন্তকারী সংস্থার অফিসারদের, তাতে শাহজাহানের বিষয়ে নতুন করে খোঁজখবর শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।
কে এই শাহজাহান? বাড়িতে থেকেও কেন শুক্রবার সকালে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হলেন না তিনি? কি লুকোতে চাইছেন তৃণমূল নেতা? এমনই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সন্দেশখালি ১-ব্লকের তৃণমূল সভাপতি এবং জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষের সম্পত্তির খতিয়ানের দিকে নজর দিয়েছেন তদন্তকারীরা। আর তাতেই উঠে এসেছে শাহজাহানের বিপুল সম্পত্তির হদিস।
২০২৩ সালের ১৪ জুন পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় কমিশনকে জমা দেওয়া শাহজাহানের হলফনামার দিকে তাকিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার জোগাড় তদন্তকারীদের। কী কী সম্পত্তি রয়েছে 'সন্দেশখালির বাদশাহে'র?
কমিশনকে জমা দেওয়া হলফনামায় শাহজাহান নিজেই জানিয়েছেন, ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৯২ লক্ষ ১২ হাজার টাকা! সোনার গয়না রয়েছে ২ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার। ১৭টি গাড়ি।
কমিশনকে জমা দেওয়া তথ্য নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেওয়া শাহজাহান হলফনামায় আরও জানিয়েছেন, ৪৩ বিঘা জমির মালিক তিনি। যার বাজারদর প্রায় ৪ কোটি টাকা। বাৎসরিক আয় ১৯ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮৩২ টাকা। সরবেড়িয়ায় তাঁর পাকা বাড়ির বাজারমূল্য ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।
কীভাবে উত্থান এই শাহজাহানের?
এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, উত্তর ২৪ পরগনায় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় যে সব সংখ্যালঘু নেতার দাপট ছিল তাঁদের অন্যতম ছিলেন মজিদ মাস্টার ও বাবু মাস্টার। শেখ শাহজাহানের উত্থানও বাম জমানার শেষ দিকে। এলাকার অনেকে বলেন শেখ শাহজাহান এপার বাংলার লোকই নন। তিনি অনুপ্রবেশকারী। ওপার বাংলা থেকে এসেছেন।
বামফ্রন্ট জমানার শেষ দিকে স্থানীয় বিধায়ক অনন্ত রায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন এই শেখ। তাঁর বিরুদ্ধে কাঠ ও গরু পাচারের অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে মানুষ পাচারের অভিযোগও রয়েছে শাহজাহানের বিরুদ্ধে। এসবের মাধ্যমেই তাঁর প্রতিপত্তি হয়েছিল বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেন।
২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর পরিস্থিতি বদলায়। মাথার উপর থাকা বাম বিধায়কের ছায়া সরে যেতেই বিপাকে পড়েন শাহজাহান। তার পর ২০১৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। বাম আমলে অবশ্য শাহজাহান কোনও পদ পাননি।
সূত্রের খবর, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তথা বালুই শাহজাহানকে নিয়ে এসেছিলেন জোড়াফুলে। তার পর তাঁর বদান্যতায় সাংগঠনিক পদ পান শাহজাহান। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে নুসরত জাহানকে বসিরহাটে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। সংখ্যালঘু ভোট একত্র করে নুসরতকে জেতানোর ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। তার পুরস্কারও জোটে। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল প্রার্থী করে শেখ শাহজাহানকে। জেলা পরিষদে জিতে কর্মাধ্যক্ষ হন তিনি।