শেষ আপডেট: 12th February 2025 15:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হাঁটাচলা তো দূর, ঠিকমতো দাঁড়াতে পর্যন্ত পারেন না। ছোট বয়সে হাজারো শারীরিক সমস্যা থাকলেও তা কখনওই লেখাপড়ার রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সে কারণেই নিজের পায়ে হাঁটতে না পারলেও বাবার কোলে চড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে রীতিমতো তাক লাগালেন নামখানার ফ্রেজারগঞ্জের অমরাবতী গ্রামের বাসিন্দা তমোশ্রী মণ্ডল। চলতি বছর জিবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
শুধু বাবা নয়, মেয়েকে সাহায্য করতে এসেছেন মা-ও। জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ১৬ বছর বয়স হলেও তাঁর উচ্চতা মেরেকেটে আড়াই ফুট। তবুও মনের জোরে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তমোশ্রী। সব প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতা ছাত্রীর প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে মাথানত করেছে।
মঙ্গলবার মাধ্যমিকের ইংরাজি পরীক্ষা ছিল। বাবার কোলে চেপে রাজনগর বিশ্বম্ভর হাই স্কুলে পৌঁছে যায় পড়ুয়া। সেখানেই পরীক্ষার সিট পড়েছে তাঁর। সূত্রের খবর, স্থানীয় নারায়ণীতলা ধনেশ্বর শিক্ষা সদনের ছাত্রী তমোশ্রী। বাবা তরুণ মণ্ডল পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং মা গৃহবধূ। অভাবের সংসারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চায় সে। তাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ইচ্ছা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর।
শরীরে হাড়ের কোনও বৃদ্ধি হয়নি। ক্যালসিয়াম না থাকা-সহ আরও সমস্যা রয়েছে শরীরে। কিন্তু সব সমস্যা দূরে সরিয়ে তমোশ্রী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে মুখে চওড়া হাসি। জানায়, 'একটু টেনশন হচ্ছে একটু। তবে এত বড় পরীক্ষা দিতে পেরে আনন্দিত।'
তমোশ্রীর মা মামনিদেবীর কথায়, ‘মেয়ে ছোটবেলায় বসতেই পারত না। এখন বসতে পারলেও কোনওভাবেই দাঁড়াতে পারে না। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি ছবি আঁকার দিকে ঝোঁক ছিল তাঁর। তাই স্কুলে ভর্তির সিদ্ধান্ত। রোজ কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতে হত। আজও মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে নিয়ে এসেছি।'
শারীরিক সমস্যা থাকলেও মেয়ের লেখাপড়ায় এতটুকু খামতি রাখতে চায় না পরিবার। মা আরও জানিয়েছেন, ও যতদূর করতে চায়, করবে। আমরা চেষ্টা করে যাব। সবসময় পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।