জৌলুসহীন এই পুজোয় সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালি ঐতিহাসিকের স্মৃতি
শেষ আপডেট: 16th September 2024 14:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো, উত্তর ২৪ পরগনা: তিনি সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কারক। সারাবিশ্ব তাঁকে আর ডি ব্যানার্জি নামে চেনে। তবে বাংলার মানুষ তাঁকে চেনেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নামে। বাঙালি এই প্রত্নতত্ত্ববিদের বাড়ি দুর্গাপুজোও একসময়ে ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। কালের চক্রে এখন জৌলুস অনেকটাই কমেছে। স্থানীয়রা কাছে এই পুজো "বিড়ালহাতি দুর্গা" নামে পরিচিত।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে রাখালদাসের শৈশব কেটেছিল। পরে বনগাঁর ছয়ঘরিয়া এলাকায় চলে আসেন তাঁরা। সেখানেই রয়েছে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়ি। সাড়ে তিনশ বছর এই এলাকায় দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। এখানে প্রতিমা অন্যান্যদের থেকে একটু আলাদা। প্রতিমার সামনের দুটি হাত সাধারণ হলেও বাকি আটটি হাত বিড়ালের পায়ের মতো ছোটো। লোকমুখে প্রচলিত আছে, রাখালদাসের ঠাকুদার গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম এই পুজোর প্রচলন করেন। গৌরহরিকে দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন। সেই স্বপ্নাদেশে গৌরহরি দেবীকে যে রূপে দেখেছিলেন, সেভাবেই এখানে পূজিতা হন দুর্গা।
জন্মাষ্টমীর দিন আমকাঠের তৈরি নতুন কাঠামোতে প্রতিমা তৈরি কাজ শুরু হয় ঠাকুর দালানে। সেই পরম্পরা আজও ধরে রেখেছেন রাখালদাসের উত্তরসূরীরা। প্রতিপদের প্রথমদিন বেলতলায় পুজোর পর ঠাকুর দালানে ঘট বসিয়ে দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যান্য জায়গায় পঞ্চমী থেকে পুজো শুরু হয়। কিন্তু বন্দ্যোপাধ্য়ায় বাড়িতে পুজোর শুরু রীতি রয়েছে প্রথমা থেকে। একসময় সপ্তমী থেকে নবমী পশুবলি হত। কিন্তু পরে সে নিয়ম বন্ধ হয়ে যায়। এখন চিনি- নাড়ু দিয়ে নৈবেদ্য দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে।
"বিড়ালহাতি দুর্গা" নিরঞ্জনেও রয়েছে অভিনবত্ব ৷ দশমীর দিন সন্ধ্যাতারা ওঠার পরে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তাপর নাওভাঙা নদীতে নিয়ে গিয়ে দু'টি নৌকোর উপর প্রতিমাকে রেখে সাতপাক ঘোরানো হয়। ধীরে ধীরে দুটি নৌকো সরিয়ে নিয়ে নিরঞ্জন করা হয় প্রতিমা।
রাখাল দাসের বংশধরেরা সকলে এখন কলকাতায় থাকেন। পুজোর সময়ে তাঁদের দেখা পাওয়া যায় বনগাঁর বাড়িতে। মূলত স্থানীয়রা এই পুজোর দেখাশোনা করেন। তাঁরাই জানিয়েছেন, জমিদার মেজাজের মানুষ ছিলেন রাখালদাস। সেই সময়ে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো ছিল রাজকীয়। এলাকার মানুষের বাড়িতে হাঁড়ি চড়ত না পুজোর চারদিন। দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণ করতেন।