শেষ আপডেট: 26th September 2024 17:57
দ্য ওয়াল ব্যুরো, উত্তর ২৪ পরগনা: বিভূতিভূষণের স্মৃতিবিজরিত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগায়ো গ্রাম পানিতর। এই গ্রামের মধ্যে দিয়েই বয়ে গেছে ইছামতি। সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী গৌরীদেবী ছিলেন পানিতরের মোক্তারের মেয়ে। তাঁর বাড়ির পুজোই ধোনির ঘরের দুর্গাপুজো নামে খ্যাত। পুজোর এই পানিতরই হয়ে ওঠে দুই বাংলার মানুষের মিলনস্থল।
এখন জমিদারি নেই। তবে জৌলুস হারায়নি ধোনির ঘরের পুজো। এখন গ্রামের মানুষ এই পুজোর আয়োজন করেন। ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ উৎসবে মেতে ওঠেন। অষ্টমী ও নবমীতে গ্রামের কোনও বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না। এই দুদিনই চলে মহাভোজ। স্থানীয়রা এই অনুষ্ঠানকে 'ভজরাম' বলে থাকেন।
বন্দ্যোপাধ্যায়দের আদি বাসস্থান ছিল পানিতরে। বিভূতিভূষণের ঠাকুরদা তারিণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কবিরাজ। তারিণীচরণের ছেলে মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়স যখন ১২ তখন সপরিবারে বসিরহাট ছেড়ে বনগাঁয় চলে যান। সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। পৈতৃকভিটে দেখভালের জন্য প্রায়ই পানিতরে আসতে হত মহানন্দকে। ছোটো থেকেই বাবা হাত ধরেই পানিতরে যাতায়াত ছিল বিভূতিভূষণের। ওই দিনগুলিতে বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ের গৌরীদেবী সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। গৌরীদেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তবে বিয়ের এক বছর পরেই কলেরায় মারা যান গৌরীদেবী। স্ত্রীর শোকে তিনি কিছুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো থাকতে শুরু করেন বিভূতিভূষণ। এই গ্রামেই তিনি থাকতে শুরু করেন। পানিতরে থাকতেই তিনি রচনা করেন ‘পথের পাঁচালী’, ‘ইচ্ছামতী’-র মতো বহু উপন্যাস। তাঁর উদ্যোগেই পানিতরের মুখোপাধ্যায় বাড়িতে পুজোর শুরু হয়। সেই থেকে শুরু এই পুজো বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো।
পুজো উদ্যোক্তা প্রলয় মুখোপাধ্যায় ও আবু তালেব মোল্লারা বলেন, "এখানে কোনও ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই। এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা অংশগ্রহণ করি। পুজো দেখতে ইছামতী পেরিয়ে ওপার বাংলা থেকেও মানুষ পুজো দেখতে আসেন।"
বসিরহাট ১ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য ও প্রাণী দফতর কর্মদক্ষ শারিফুল মণ্ডল বলেন, "এলাকাকে বিশেষভাবে সীমান্তে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জোর দেওয়া হয়েছে।"