শেষ আপডেট: 18th October 2024 17:43
দ্য ওয়াল ব্য়ুরো, উত্তর ২৪ পরগনা: আরজি করের ঘটনার 'জাস্টিস' চেয়ে অনশনে জুনিয়ার ডাক্তাররা। এই পরিস্থিতির মধ্যে 'উই ডিমান্ড জাস্টিস'-এর স্লোগান তুললেন ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাস। আরজি করের আরেক জুনিয়ার ডাক্তারের মৃত্যুর পুনরায় তদন্তে দাবি জানিয়েছেন তিনি।
২৩ বছর আগে ২০০১ সালের ঘটনা এটি। বাংলায় তখন বামশাসন চলছে। ব্যারাকপুর পুরসভার বাসিন্দা ডাক্তার সৌমিত্র বিশ্বাসের ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায় আরজি করের ললিত মেমোরিয়াল হস্টেলে। এই ঘটনাকে তৎকালীন প্রশাসন আত্মহত্যা বললে, তা মানতে চাননি সৌমিত্র বিশ্বাসের মা-বাবা। তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, "ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না, তাকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।" এই ঘটনার ন্যায় বিচার চেয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের দরজায় দরজায় ঘুরেছিলেন সৌমিত্র বিশ্বাসের মা সবিতা বিশ্বাস। কিন্তু কোনও ন্যায়বিচার পাননি।
বেশ কয়েকবছর আগে নিহত সৌমিত্র বিশ্বাসের বাবা-মা মারা গিয়েছেন। পরিবারে বেঁচে আছেন শুধু সৌমিত্রের ছোট ভাই শান্তনু বিশ্বাস। আরজি কর আন্দোলেন আবহে তিনি দাদার মৃত্যুর ন্যায়বিচার চাইছেন। তিনি চান দাদা মৃত্যুর পুনরায় তদন্ত হোক। ২৩ বছর আগে ঘটনার দাদা মৃত্যু রহস্যের ধুলো পড়া ফাইল খুলতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছেন। তাঁর কথায়, "সত্যিটা সামনে আসুক।"
শান্তনু বিশ্বাস জানিয়েছেন, দাদার মৃত্যুর সময়ে তাঁর বয়স ছিল ১৭। ২৫ অগস্ট ২০০১ সাল। প্রতিদিনের মতো ব্যারাকপুরের জয়হিন্দ পল্লীর বাড়ি থেকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন ডাক্তার সৌমিত্র বিশ্বাস। তিনি তখন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। সেদিন রাতে বাড়ি ফেরেননি সৌমিত্র। পরে তরুণী ডাক্তার পড়ুয়ার পরিবারের মতোই হাসপাতালের হস্টেল থেকে সৌমিত্রের বাড়িতে ফোন গিয়েছিল। সেখানে কর্তৃপক্ষ জানায়, হস্টেলের মধ্যে থেকে সৌমিত্র ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গিয়েছে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে গেছিলেন মা সবিতা বিশ্বাস। দেখেন, সাইড ব্যাগের ফিতে দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছিল সৌমিত্রের দেহ।
পরিবার অভিযোগ করে, "আত্মহত্যা নয়, ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।" ছেলের শরীরের থাকা একাধিক আঘাতের চিহ্ন পেয়ে তাঁরা এই দাবি করেছিলেন। হাসপাতালে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল তাঁরা। মা সবিতা বিশ্বাস দাবি করেছিলেন, ছেলে সৌমিত্রের সঙ্গে চিকিৎসক পড়ুয়াদের দ্বন্দ্ব চলছিল। তাই ছেলে মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিলেন। তবে ঘটনার তদন্ত করে সিআইডি। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট হয়নি পরিবার। ছেলের মৃত্যুর আসল কারণ যাচাই করতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করে। তবে সাক্ষাৎ হয়নি। অনেক বছর কেটে যাওয়ার পরে একসময়ে ডাক্তার সৌমিত্র বিশ্বাস মৃত্যুর তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়।
এখন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাদার মৃত্যু পুনরায় তদন্ত চাইছেন শান্তনু বিশ্বাস। তাঁর কথায়, "২৩ বছর আগে দাদা মৃত্যুর সঠিক তদন্ত হলে, এমন ঘটনা ঘটতই না।" সেদিন কী ঘটেছিল, কারা সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেবিষয়ে এখন অন্ধকারেরই রয়েছে গিয়েছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার রাতেই ডাক্তার সৌমিত্র বিশ্বাসের বাড়ি গিয়েছিলেন ব্যারাকপুরের পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর জয়দেব দাস সহ বেশ কয়েক নেতা-কর্মী। সেখানে গিয়ে নিহত চিকিৎসকের ভাই শান্তনু বিশ্বাসকে ঘটনার পুনঃতদন্তের আশ্বাস দেন। উত্তমবাবু বলেন, "বাম আমলে ওই চিকিৎসকের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত হয়নি। সিআইডি-র তদন্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখা প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব আমরা।" তাঁর অভিযোগ, সৌমিত্রের মৃত্যুর জন্য যাঁরা সেদিন দায়ী ছিল, তাঁরাই এখন আরজি করে নির্যাতিতার জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এরপরে উত্তমবাবু বলেন, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' ! আমরাও বলছি, 'উই ডিমান্ড জাস্টিস'।