হাবড়া থানায় ১৬ সেপ্টেম্বর অভিযোগ দায়ের করেন রামকৃষ্ণের ভাই জ্যোতির্ময় মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য খুব স্পষ্ট, দাদা-বৌদির হত্যাকারীদের খুঁজতে বেশি দূর যেতে হবে না, মেয়ে-জামাই পর্যন্ত গেলেই হবে।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উত্তর ২৪ পরগণায় (South 24 Parganas) হাবড়ার টুনিঘাটা লন্ডনপাড়া এলাকার ঘটনা। পাঁচ বছর আগের ১৫ সেপ্টেম্বর। গভীর রাতে নিজেদেরই বাড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রাক্তন সেনাকর্মী রামকৃষ্ণ মণ্ডল এবং স্ত্রী লীলারানীর দেহ উদ্ধার হয়। একেবারে কাছ থেকে অর্থাৎ 'পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ'-এ গুলি (Murder) করা হয় দু'জনকেই।
হাবড়া থানায় ১৬ সেপ্টেম্বর অভিযোগ দায়ের করেন রামকৃষ্ণের ভাই জ্যোতির্ময় মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য খুব স্পষ্ট, দাদা-বৌদির হত্যাকারীদের খুঁজতে বেশি দূর যেতে হবে না, মেয়ে-জামাই পর্যন্ত গেলেই হবে।
তদন্তে নেমে জ্যোতির্ময়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত দম্পতির মেয়ে নিবেদিতা সাধু এবং জামাই বান্টি সাধুকে গ্রেফতার করেন সাব-ইনসপেক্টর রামকৃষ্ণ গুরিয়া। সঙ্গে এক তৃতীয় ব্যক্তি, ভাড়াটে খুনি তথা 'শার্পশুটার' অজয় দাস।
পুলিশি জেরায় উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বাজারে বান্টির দেনার পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। পাওনাদারদের তাগাদা সহ্য করতে না পেরে শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে টাকা চেয়েছিল বান্টি। যদিও টাকা মেলেনি। সেই রাগেই স্ত্রীর সঙ্গে মিলে অজয়ের সাহায্যে ঠান্ডা মাথায় খুন করে তারা।
অপরাধী দ্রুত ধরা পড়লেও অপরাধ প্রমাণ করতে কালঘাম ছুটে যায় পুলিশের। তবে তদন্তকারী অফিসারের চার্জশিটে ধরা থাকে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং ফরেনসিক তথ্য সমেত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
মামলা চলাকালীন প্রমাণ হিসেবে পরে দাখিল করা হয় একটি কল রেকর্ডিংও। অজয়কে যখন সুপারি দেওয়া হচ্ছিল, ফোনে সেই কথোপকথন রেকর্ড করে রাখে অজয়। যা পরে উদ্ধার করে পুলিশ (West Bengal Police)।
পাবলিক প্রসিকিউটর বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের সহায়তায় চার বছরের বিচারপর্ব শেষে মামলার রায় বেরিয়েছে সম্প্রতি। নিবেদিতা, বান্টি, এবং অজয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড (Lifetime Imprisonment) শুনিয়েছে বারাসত আদালত। পাশাপাশি আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে।
অজয়ের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হওয়ায় অস্ত্র আইনের অধীনে আরও তিন বছরের কারাবাসের সাজা হয়েছে তার। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার টাকার জরিমানার অঙ্কও।