শেষ আপডেট: 7th November 2018 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ধোঁয়াশার পুরু আস্তরণ যেন ধীরে ধীরে গিলে ফেলছে সবকিছুকে। যতদূর চোখ যায় শুধু ধোঁয়াশার আচ্ছাদন। আকাশ ঢেকে গেছে বিষবাস্পে। গত কয়েকদিন ধরে দিল্লির ছবিটা এই রকমই। দিওয়ালির বাজি উৎসবের পর সেই ক্ষত বেড়েছে আরও কয়েক গুণ। বাজির ধোঁয়া আর কুয়াশা মিলে নাভিশ্বাস রাজধানীতে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, সহনশীল মাত্রার থেকে দূষণের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। দেশের শীর্ষ আদালতের বেঁধে দেওয়া দু'ঘণ্টা বাজি পোড়ানোর সময়সীমা লঙ্ঘণ করা হয়েছে আগেই। বুধবার দিনভরে শব্দবাজি ও আতসবাজির দাপটে ঘুম উড়েছে দিল্লিবাসীর। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাত ১১টা পর্যন্ত মোট এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ৩০২। দূষণের নির্ধারক হিসাবে যা ‘সিভিয়ার’ বা মারাত্মক। সন্ধে সাতটার পর থেকে একিউআই-এর মাত্রা বিগড়ে যেতে শুরু করে। ৭টায় একিউআই ধরা পড়ে ২৮১, রাত ৮টায় সেটাই বেড়ে হয় ২৯১, রাত ৯টায় ২৯৪ এবং ১০টা নাগাদ একিউআই রেকর্ড হয় ২৯৬। পর্ষদের ব্যাখ্যা, বাজির ধোঁয়া দিল্লির কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। রাত বাড়ার সঙ্গেই বেড়েছে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ। বায়ুর গতির সঙ্গে সেই ধোঁয়া ছড়িয়েছে সর্বত্র। ফলে বায়ু দূষণ বেড়ে গেছে কয়েক ডিগ্রি। দিল্লির আনন্দ বিহার, আইটিও ও জাহাঙ্গীরপুরিতে দূষণের মাত্রা সর্বাধিক। প্রশাসন সূত্রে খবর, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাজির প্রকোপ রোধ করা যায়নি। বরং রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেটা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। ময়ুর বিহার এক্সটেনশন, লাজপত নগর, আইপি এক্সটেনশন, দ্বারকা, নয়ডা সেক্টর ৭৮-এ সবচেয়ে বেজি শব্দবাজির তাণ্ডব দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী এই মুহূর্তে দিল্লির বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা পিএম ২.৫ ও পিএম ১০-এর মাত্রা পৌঁছেছে ৩৬৫ এবং ৫০৩ মাইক্রোগ্রাম প্রতি কিউবিক মিটারে, যা স্বাভাবিকের থেকে অস্বাভাবিক বেশি। দিন কয়েক আগেই একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল দিল্লিতে শ্বাস নেওয়া দিনে ১৫-২০টা সিগারেট খাওয়ার সমান। দূষণ মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই কঠোর পদক্ষেপ করেছে দিল্লি প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার থেকে দিল্লিতে চলেছে ১০ দিনের দূষণ জনিত আপৎকালীন ব্যবস্থা। বন্ধ রাখা হয়েছিল সব রকম নির্মাণ কাজ, কয়লা নির্ভর শিল্প ও কল-কারখানা। ব্যক্তগত গাড়ির বদলে গণ পরিবহণ ব্যবহারের আর্জি জানানো হয়েছিল। গণ পরিবহনের সংখ্যা বাড়াতে চালানো হয়েছিল অতিরিক্ত ট্রেন ও মেট্রো। দিল্লি-এনসিআর এলাকায় সরকারি নির্মাণকাজও স্থগিত রাখা হয়েছিল। তা ছাড়া বন্ধ ছিল জঞ্জাল, আবর্জনা পোড়ানোর কাজ। গাড়ির দূষণ বিধি চেকিংয়ের দিকে রাখা হয়েছিল কড়া নজর। পরিবেশবিদদের মতে, যাবতীয় বিধি-নিষেধ হেলায় উড়িয়েই রাজধানীতে দূষণের মাত্রা লাগামছাড়া হচ্ছে। দূষণ বিধি অমান্য করলে ফৌজদারি আইনে মামলা দায়েরের সুপারিশও করে দিল্লির দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। সরকারি ভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতিও মেলে। রাজধানীতে জোড়-বিজোড় ফর্মুলাও প্রয়োগ করা দেখা হয়, তাতে কিছুটা সুরাহা হলেও ফের একই পর্যায়ে পৌঁছেছে দিল্লি। দূষণ কবলিত এলাকাগুলি খতিয়ে দেখতে ৫২ জনের একটি দল নিয়োগ করা হয়েছে। ফরিদাবাদ, গুরগাঁও, গাজিয়াবাদ ও নয়ডায় ইতিমধ্যেই পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা।